Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

nahidসিলেট ও সুনামগঞ্জে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। আর এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আস্থাভাজন কতিপয় প্রভাবশালী নেতা, ঠিকাদার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কর্তারা। তবে এর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন মন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত যুবলীগ নেতা আব্বাস উদ্দিন।

অভিযোগ রয়েছে, কাজ না করেই প্রকল্পগুলোর সিংহভাগ টাকা লুটপাট করা হয়েছে। কাজ হয়েছে মর্মে বিপুল অঙ্কের এ বরাদ্দের সিংহভাগ উঠিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদাররা। ক্ষমতাসীন দলের কয়েক নেতার প্রভাবে ও টু-পাইসের বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের প্রকৌশলীরা কাজের বিল পরিশোধ করে দিয়েছেন।

chardike-ad

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট ও সুনামগঞ্জের ২০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ৬টি গ্রুপে টেন্ডারের মাধ্যমে এসব টাকার বরাদ্দ দেখানো হয়।

২০১৬ সালের ৫ মে থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব কাজের টেন্ডার হয়। টেন্ডারে কাজ সম্পন্নের সর্বোচ্চ সময়সীমা দেয়া হয় ১৮০ দিন। অথচ আজ অবধি প্রকল্পভুক্ত অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজের ছোঁয়াই লাগেনি।

যদিও বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা গত অর্থবছরের জুনেই তুলে নেয়া হয়েছে। প্রকৌশলীরা কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে মর্মে ছাড়পত্র দিয়েই টাকা উত্তোলনের পথ সুগম করে দিয়েছেন।

উন্নয়ন প্রকল্পভুক্ত সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ইসরাব আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয় ৭০ লাখ টাকা। অথচ আজ পর্যন্ত কাজ শুরুই হয়নি। যদিও প্রকল্পের ৩০ লাখ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে।

একই অবস্থা সিলেটের গোলাপগঞ্জের মীরগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের। এ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু গত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানে কোনো কাজ না করিয়েই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বরাদ্দের ৪০ লাখ টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন।

গোলাপগঞ্জের মুরাদিয়া সবুরিয়া নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে গত অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬০ লাখ টাকা। এখানেও কোনো কাজ না করে ঠিকাদার ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন।

এছাড়াও সুনামগঞ্জের দিরাই জগদল কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। কাজ না করেই এ প্রকল্পের অর্ধকোটি টাকা তুলে নেন ঠিকাদার।

সিলেটের গোলাপগঞ্জের পনাইরচক উচ্চবিদ্যালয়ের উন্নয়নে বরাদ্দ দেয়া হয় ৭০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি, অথচ তুলে নেয়া হয়েছে ৪০ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, পূর্ববর্তী প্লান বদলে নতুন প্লানে কাজ করছেন ঠিকাদার। তবে বন্যার কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারের নাম ও মোবাইল নম্বর চাইলে এখন দেয়া যাবে না বলে ফোন রেখে দেন তিনি।

সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনের কাজে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কাজ না করেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছে সিংহভাগ টাকা। কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ জানান, কাজ এখন শেষ পর্যায়ে।

দিরাই জগদল কলেজের অধ্যক্ষ পংকজ কান্তি রায় জানান, নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়েছে, এটা অনেক আগেই জেনেছেন। তবে গত অর্থবছরে কোনো কাজ হয়নি। সম্প্রতি কাজ শুরু হয়েছে। ৯০ ভাগ কাজ এখনও বাকি।

দক্ষিণ সুরমার ইসরাব আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল শাহাব উদ্দিন জানান, ভবনের জন্য টাকা বরাদ্দের কথা তিনি জানেন, তবে কোনো কাজ হয়নি। আগামী শীত মৌসুমে কাজ শুরু করা হবে বলে জেনেছি। ঠিকাদার কে, তাও জানি না। তার নাম ও মোবাইল নম্বরও আমার কাছে নেই।

প্রকল্পের আওতাভুক্ত অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই একই অবস্থা। অথচ কাজ না করেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বরাদ্দের টাকা।

এ ব্যাপরে জানতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিমের মোবাইল নম্বরে বারবার কল ও মেসেজ দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এরপর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী অনন্ত কুমার ভৌমিককে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ সম্পন্ন হয়নি। তবে শিগগিরই হবে। এসব প্রকল্পের অল্প টাকা উত্তোলন করেছেন ঠিকাদাররা।’

তিনি বলেন, ‘কাজ না করে রাজনৈতিক প্রভাবে বিল উত্তোলনের ঘটনা ঘটেনি।’

এদিকে প্রকল্পগুলো ঘিরে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘আমি আইনজীবী। পেশা নিয়েই আমি ব্যস্ত। ওসব বিষয় দেখার জন্য আলাদা মানুষ আছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য নয়।’ সৌজন্যে: যুগান্তর