বিভিন্ন দেশে অভিবাসন-প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশই প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (১৯ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণাটির ফলাফল তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রামরু’র চেয়ারপারসন ড. তাসনীম সিদ্দিকী।
প্রতারণার শিকার শতকরা ৫১ ভাগের মধ্যে শতকরা ১৯ ভাগ মানুষ টাকা দেওয়ার পরও বিদেশে যেতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাকি শতকরা ৩২ ভাগ বিদেশে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারণার শিকার বাংলাদেশিরা গড়ে ২ লাখ ৪৩ হাজার ২৪৭ টাকা করে হারিয়েছেন। অভিবাসন-প্রত্যাশীদের মাত্র শতকরা ৩ ভাগ শুরু থেকে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশের পর ড. তাসনীম সিদ্দিকী বলেন, ‘এই প্রতারণার দায়ভার কেবল দালালদের কাঁধে দেওয়ার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রকেও এর দায় নিতে হবে। কোথায় কিভাবে মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে তা খুঁজে সমাধান করতে হবে তাদের। বিদেশে যেতে ব্যর্থ শতকরা ১৯ ভাগকে শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। কারণ বিলেতফেরত বাংলাদেশিদের সংখ্যাও এখন অনেক বড়।’
বিদেশ থেকে ফেরার পর তাদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন রামরুর চেয়ারম্যান। আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বাড়ানো এবং মধ্যস্থতাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ। বিপুলসংখ্যক অভিবাসন-প্রত্যাশীকে পরিকল্পনামাফিক কাজে না লাগালে তারা দেশের বোঝা হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘অভিবাসন প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটানো প্রয়োজন। এজন্য এ ধরনের গবেষণার তথ্য কাজে লাগবে।’
একই মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি চিফ কে এম আলী রেজা বলেন, ‘যারা স্টুডেন্ট বা ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে থেকে যাওয়ায় অবৈধ হয়ে পড়েন তারা কোনও সহযোগিতা পাবেন না, এটা আমাদের আইনে নেই। এ ধরনের প্রতারণা রাতারাতি কমানো যাবে না। রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি দালাল ও এজেন্সিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।’
অভিবাসন-প্রত্যাশীদের সরাসরি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন টাঙ্গাইলের মধ্যস্থতাকারী সানোয়ার হোসেন। তিনি জানান, জেলা শহরগুলোতে এজেন্সিগুলোর সাব-এজেন্সি না থাকায় অনেক মধ্যস্থতাকারী প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পায়। তিনি এজেন্সিগুলোকে নিজেদের বৈধ এজেন্টের মাধ্যমে বিদেশগামী লোক সংগ্রহের আবেদন করেন।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বায়রা’র প্রেসিডেন্ট বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এজেন্সির মালিকরা সাব-এজেন্ট দিতে ভয় পায়। কারণ তারা প্রতারণার দায় নিজেদের কাঁধে নিতে চায় না। আবার প্রতারিতরাও আইনের আশ্রয় নিতে চান না। ফলে প্রতারকদের বিচারের আওতায় আনাও কঠিন হয়ে যায়।’
বুধবারের সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জাস্টিস মোহাম্মদ নিজামুল হক। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান। সৌজন্যে: বাংলা ট্রিবিউন