বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সর্বশেষ বড় ধরনের সংস্কার হয়েছিল ২০১১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট সামনে রেখে। ওই সময় প্রায় ৩২ কোটি টাকার সংস্কার কাজ হয়েছিল দেশের প্রধান এ স্টেডিয়ামে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আবার বড় ধরনের সংস্কারকাজ করতে যাচ্ছে সরকার। তবে এবার কোনো টুর্নামেন্ট উপলক্ষে নয়, দেশের প্রধান ক্রীড়া ভেন্যু বলেই নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামকে।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কার কাজের ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) তৈরি শুরু করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। ডিপিপি তৈরি করে পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে, তারপর অনুমোদন দেবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সরকারের বাৎসরিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় (এডিপি) এ প্রজেক্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আগামী ছয় মাসের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করতে পারবে বলে আশা করছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা।
চেয়ার বসানোর পর গ্যালারির দর্শক ধারণক্ষমতা কমে গেছে অনেক। এখন গ্যালারিতে চেয়ার ১৯ হাজারের বেশি। স্টেডিয়ামটি এখন ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে ফুটবল ও অ্যাথলেটিক। যে খেলাই হোক-সিংহভাগ আসনই থাকে ফাঁকা। তাহলে কেন গ্যালারিতে বসানো হচ্ছে শেড আর উন্নত মানের চেয়ার?
‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম দেশের প্রধান ভেন্যু। জাতীয় দিবসগুলোতে মাননীয় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন এ স্টেডিয়ামে। আসেন বিদেশি গণ্যমান্য অতিথিও। দেশের প্রধান স্টেডিয়ামটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখার জন্যই এ সংস্কার কাজ। এখন হয়তো দর্শক নেই; আগামীতে যে আসবে না, তাতো নয়। দর্শক আসার পরিবেশও তো তৈরি করতে হবে’-জাগো নিউজকে বলেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস।
স্টেডিয়ামের মূল কাঠামো ঠিক রেখেই করা হচ্ছে এ সংস্কারযজ্ঞ। যেখানে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে পুরো গ্যালারিতে শেড বসাতে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা জানান, ‘পুরো সংস্কার কাজের জন্য ব্যয় হবে ৮০ কোটি টাকার মতো। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২০ থেকে ২২ কোটি টাকা লাগবে গ্যালারিতে শেড বসাতে। চেয়ার বসাতে লাগবে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। ফ্লাডলাইট পরিবর্তন করতে লাগবে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। আর অ্যাথলেটিক ট্র্যাক স্থাপনের জন্য ১৫ কোটি টাকার মতো।’
গ্যালারি ও ভিআইপির চেয়ার সরিয়ে সেখানে বসানো হবে উন্নতমানের নতুন চেয়ার। এর মধ্যে ভিআইপি গ্যালারিতে বসানো হবে ফোল্ডিং চেয়ার। বদলে ফেলা হবে স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট। তবে ফ্লাডলাইটের টাওয়ার অপরিবর্তিত রেখে শুধু বদলে ফেলা হবে বাতি। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো স্টেডিয়ামে আলো ছড়াবে এলইডি বাতির। এর মাধ্যমে আলো ও সৌন্দর্য দুটিই বাড়বে।
ফ্লাডলাইট, শেড, চেয়ার এবং অ্যাথলেটিক ট্র্যাকের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু কাজ আছে এ সংস্কারের আওতায়। ড্রেসিং রুমগুলো আধুনিকায়ন, খেলোয়াড়দের জন্য জিম সুবিধা বৃদ্ধি, ডোপটেস্ট রুম নির্মাণ, মিডিয়া সেন্টার আধুনিকায়ন, টিভি চ্যানেলগুলোর জন্য ক্যামেরা স্ট্যান্ড তৈরি, ড্রেসিং রুমগুলোর উন্নয়ন ও স্কোর বোর্ড ঠিকঠাক। স্টেডিয়ামের চারদিকের রাস্তা আরও উন্নতমানের করা হবে। পুরো স্টেডিয়ামেই লাগবে রঙের ছোঁয়া। বড় ধরনের সংস্কারে বদলে যাবে দেশের প্রধান এ স্টেডিয়ামের চেহারা।