অলসতা এমনি একটি জড়তা, যাকে আসলে সংজ্ঞায়িত করা হয় তুলনার মাধ্যমে। অমুকের চেয়ে অমুক অলস, এই ধরনের কথা আমাদের প্রায়ই শুনতে হয়। তবে একটা গোটা দেশই যদি অলসদের তালিকার শীর্ষে থাকে তাহলে কেমন হয় শুনতে?
তেমনি এক কাজ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষের স্মার্টফোন থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে দেখতে চেষ্টা করেছেন কোন দেশের লোক শারীরিকভাবে কতটা সক্রিয়।
পৃথিবীর ২০টি অলস দেশের তালিকায় ইতালি, বৃটেন, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড এসব দেশের নামই রয়েছে। পৃথিবীর ১২২টি দেশের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘দ্য ল্যানচেট’ সবচেয়ে অলস দেশের এই তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় প্রথমেই আছে দক্ষিণ ইউরোপের দেশ মাল্টা।
তথ্যে বলা হয়েছে দেশটি প্রায় ৭১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ নিস্ক্রিয়। দ্বিতীয় স্থানে আছে সুইজারল্যান্ড। এই দেশের মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশ নিস্ক্রিয়। অবস্থানে আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। মরুভূমির এই দেশে ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ নিষ্ক্রিয়। এরপর ক্রমান্বয়ে আসে সার্বিয়া, আর্জেন্টিনা, মাইক্রোনেশিয়া, কুয়েত, বৃটেন, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, জাপান, ডমেনিকান রিপাবি¬ক, নামিবিয়া, ইরাক, তুরস্ক, সাইপ্রাস, ইতালি, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভুটান।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় ৬ কোটি ৮০ লক্ষ দিনের সমান, মিনিট ধরে ধরে ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গড়ে পৃথিবীতে মানুষ দিনে ৪৯৬১টি পদক্ষেপ নেয়।
এর মধ্যে হংকংয়ের মানুষ গড়ে সবচেয়ে বেশি পদক্ষেপ নেয়। তারা দিনে ৬৮৮০বার পা ফেলে। আর র্যাঙ্কিংয়ের একেবারে নিচে আছে ইন্দোনেশিয়া। সে দেশের মানুষ গড়ে দিনে মাত্র ৩৫১৩টি পদক্ষেপ নেয়।
এই গবেষণা থেকে আরও নানা তথ্য পাওয়া গেছে, যা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে ওবেসিটি বা স্থূলতার সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করতে পারে।
জাপানের মতো দেশ – যেখানে স্থূলতা বা সামাজিক বৈষম্যের সমস্যা কম – সেখানে দেখা গেছে মহিলা ও পুরুষরা প্রায় সমান শারীরিক অনুশীলন করে।
গবেষণায় অমেরিকার ৬৯টি শহরে পায়ে হেঁটে কতটা চলা যায়, সেই পরীক্ষাও চালানো হয়েছে। আরও দেখা গেছে নিউ ইয়র্ক বা সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহর বেশ পথচারী-বান্ধব, সেখানে পায়ে হেঁটে অনেক কিছুই করা যায়।
সুতরাং কর্মঠ দক্ষিণ এশিয়ান হিসেবে আমরা গর্বই করতে পারি। সেইসঙ্গে ক’দিন আগেতো ল্যানচেট জানিয়েই দিয়েছে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচাইতে পরিশ্রমী দেশগুলোর মধ্যে একটি। সুতরাং অলস বাঙ্গালি বিশেষণটি ভুল প্রমাণ করার গর্ব আমরা এখন করতেই পারি।