বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে চারলেন রাস্তা নির্মাণে ব্যয় বেশি। এর পেছনে অন্যতম কারণ দুর্নীতি ও প্রতিযোগিতাহীন টেন্ডার। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক অফিসে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক প্রতিনিধি চিমিও ফান, ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদ শেখ তানজিব ইসলাম, অ্যানালিস্ট সাবিহা সুবহা মোহনা ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরিন এ মাহবুব।
দেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকলে এ ধরনের প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। আর যদি দুর্নীতি অনেক বেশি থাকে তাহলে এমনটি হয়। বাংলাদেশে উচ্চমূল্যে অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়নে (মহাসড়ক নির্মাণ) ব্যয় অনেক বেশি। বাংলাদেশে চারলেন রাস্তার জন্য আড়াই মিলিয়ন থেকে প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কিলোমিটার প্রতি খরচ হচ্ছে। সেখানে ভারতে এই খরচ ১ দশমিক ১ থেকে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার। চীনে হচ্ছে ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। আর ইউরোপে হচ্ছে সাড়ে ৩ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, রংপর-হাটিকুমরুল চারলেন প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, ঢাকা-সিলেট চারলেনে ৭ মিলিয়ন ডলার, ঢাকা-মাওয়ায় ১১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার, ঢাকা-চিটাগং ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চারলেন প্রকল্পে আড়াই মিলিয়ন ডলার।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দেশভেদে প্রকল্প ব্যয় ভিন্ন হতে পারে। এর স্বাভাবিক কারণের মধ্যে ভৌগোলিক ও এক্সসেস টু ট্রান্সপোর্ট (পণ্য সামগ্রী ও যাতায়াত ব্যবস্থা অপ্রতুল) ও জমি উঁচু-নিচুর ব্যাপার আছে। তবে বাংলাদেশে এসব প্রকল্পে খরচ বাড়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকলে এ ধরনের প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। আর যদি দুর্নীতি অনেক বেশি থাকে তাহলে এমনটি হয়।
দেখা গেছে, দূর্নীতি সূচকে যেসব দেশ এগিয়ে রয়েছে, সেসব দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ বেশি থাকে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে প্রকল্পের টেন্ডারিং প্রতিযোগিতা অনেক কম। এতে খরচ আরও বাড়ছে। যদি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা দুর্বল থাকে তবে মৌলিক সমস্যার সমাধান হবে না বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশি বেশি ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। আর তারা বছরের পর বছর শুধু লোকসান করে যাচ্ছে। এখানে লোকসান কমানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। উল্টো এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে আরও মূলধন দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, জ্বালানির দাম স্থানীয়ভাবে নির্ধারণ না করে আন্তর্জাতিকভাবে হওয়া উচিত। এতে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ সহজ হবে। ব্যাংকে আমানতের সুদের হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্ধারণ করতে হবে। কারণ মোট সুদের ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশই সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেয়া হয়।