Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

bangladesh-india‘আচ্ছা ভারতই যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তার নিশ্চয়তা কি? শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের যে কেউওতো হতে পারে। গ্রুপের খেলাতো এখনো শেষ হয়নি। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান ম্যাচ বাকি আছে। গ্রুপের তিন ম্যাচ শেষে ভারতের পয়েন্ট ৪। আর পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট দুই খেলায় ২ করে। এই দু`দলের সামনে সমান সুযোগ আছে ভারতকে ছুয়ে ফেলার।`

আজ শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত না হয়ে শেষ হলে বিজয়ী দলেরও পয়েন্ট দাঁড়াবে চার; মানে ভারতের সমান। তাহলে ভারত বি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয় কি করে? রোববার রাতে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ শেষ হবার পর থেকে অনেকের কৌতূহলী প্রশ্ন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা জল্পনা-কল্পনা।

chardike-ad

এটা সত্য যে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সামনে সুযোগ আছে পয়েন্টে ভারতকে ছুয়ে ফেলার। কিন্তু আসল সত্য হলো, ভারতের সঙ্গে পয়েন্ট সমান হয়ে গেলে নেট রানরেটে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ ঠিক করা হবে। সেই নেট রানরেটে ভারত অনেক এগিয়ে। ভারতীয়দের রানরেট এতটাই সমৃদ্ধ যে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের পক্ষে ঐ রানরেট টপকে শীর্ষস্থান পাওয়া প্রায় অসম্ভব। ভারতের নেট রানরেট +১.৩৭০। শ্রীলঙ্কার -০.৮৭৯। আর পাকিস্তানের -১.৫৪৪। নেট রানরেটের এ অনুপাতই বলে দিচ্ছে ভারত যোজন যোজন এগিয়ে। এক ম্যাচে এত বেশি রান পার্থক্য দূর করা প্রায় অসম্ভব।

আর তাই ভারতকে বি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ধরে এ গ্রুপ রানার্সআপ বাংলাদেশের সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করাও হয়ে গেছে। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত এবং কার্যকর জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর আনুষ্ঠানিক ফিকচারেও দেখানো হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সেমিফাইনাল। আর সেই সেমিফাইনালকে ঘিরে এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে সর্বোচ্চ উৎসাহ, আগ্রহ আর কৌতূহল।

বলার অপেক্ষা রাখে না, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মত বিশ্ব আসরে আগে কখনই সেমিফাইনাল খেলেনি বাংলাদেশ। সর্বশেষ মানে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবার কোয়ার্টারফাইনাল খেললেও আইসিসির কোন মেগা বা বিশ্ব আসরে এই প্রথমবার সেমিফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ জাতীয় দল। খুব স্বাভাবিকভাবেই গোটা দেশে বিপুল সাড়া পড়ে গেছে। গোটা জাতি উদ্বেলিত। বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের মধ্যে একটা অন্যরকম রোমাঞ্চ।

এদিকে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ-ভারতের সেমিফাইনাল ‘টক অফ দ্যা কান্ট্রি হয়ে পড়েছে।’ রোজার মাস, সংযম আর সিয়াম সাধনার মাস। সামনে ঈদ, ঘরে ঘরে তার প্রস্তুতিও চলছে। এর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশ একটা বিশেষ আলোড়ন জাগিয়েছে। রীতিমত হৈ চৈ পড়ে গেছে। স্কুল ছাত্র, পাড়ার-গলির দূরন্ত কিশোর থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবার মাঝেই এ সেমিফাইনাল আলাদা সাড়া জাগিয়েছে। একটা অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য সবার মাঝে। উন্মুখ অপেক্ষা। কখন শুরু হবে সেমির লড়াই। কোটি চোখ তাকিয়ে বার্মিংহামের এজবাস্টনের দিকে।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মত বিশ্ব আসরে প্রথমবার সেমিফাইনাল খেলা নিয়ে সর্বোচ্চ উৎসাহ-আগ্রহ আর কৌতূহল ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ কেন, অন্য যে কোন দেশে হলেও এমন সাড়াই পড়তো। কিন্তু বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের মাঝে ১৫ জুনের সেমিফাইনাল অন্য মাত্রা পেয়েছে মূলত ২০১৫ সালের ঘটনাবহুল কোয়ার্টার ফাইনালের কারণে।

ভারত কখনই ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। হবার প্রশ্নই আসে না। ক্রিকেট বিশ্বে ভারত বরারবই পরাশক্তি। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। দুইবার টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন ও একবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বিজয়ী। আর সেখানে টেস্টের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য বাংলাদেশ এখনো সব ফরম্যাটেই উঠতি শক্তি। এই প্রথম কোন বিশ্ব ইভেন্টের শেষ চারে।

কিন্তু একটি ঘটনাবহুল ম্যাচ বাংলাদেশ-ভারত লড়াইকে অন্যমাত্রায় নিয়ে গেছে। ভারতের সঙ্গে সেমির লড়াই, চিন্তা করতেই সবার ভাবনায় চলে আসছে গত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের স্মৃতি। তবে সে স্মৃতি সুখের নয়। আশা ভঙের। ঐ ম্যাচ জিতেনি মাশরাফির দল। হেরেছে ১০৯ রানে। তবে ভক্ত ও সমর্থকদের মনে ঐ খেলা দারুণভাবে দাগ কেটে আছে। সবারই মনে হয় ঐ ম্যাচের চালচিত্র অন্যরকম হতে পারতো। হয়তো বাংলাদেশও জিততে পারতো।

২০১৫ সালের ১৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে হওয়া ঘটনাবহুল কোয়ার্টার ফাইনালের দুটি ঘটনা বাংলাদেশ সমর্থক ও ভক্তদের মনের মাঝে দাগ কেটে আছে। বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের বড় অংশ এখনো মনে করেন, ঐ ঘটনাবহুল কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ার ও টিভি আম্পায়ারের দুটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে। দুটি নিজেদের পক্ষে আসলেতো কথাই ছিল না, অন্তত একটি সিদ্ধান্ত অনুকূলে আসলেও হয়তো ম্যাচের ফল অন্যরকম হতে পারতো। তাই ঐ ম্যাচ এখনো টাইগার সাপোর্টারদের আফসোস আর যন্ত্রনার এক ম্যাচ হয়েই আছে।

প্রথম ঘটনা, ভারতীয় ইনিংসের ঠিক ৪০ নম্বর ওভারের চতুর্থ ডেলিভারিতে। ভারতের রান তখন ৪ উইকেটে ১৮৬। ভারতীয় ইনিংসের টপ স্কোরার রোহিত শর্মা ৯০ রানে ক্যাচ তুলে দিলেন বাংলাদেশ পেসার রুবেল হোসেনের বলে। ফুলটচ ডেলিভারি। রোহিত শর্মা তাতে পুল খেললেন। বল চলে গেল ডিপ মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারের হাতে। কিন্তু আম্পায়ারের মনে হলো বল কেমাড়ের ওপরে ছিল। তাই নো ডাকা হলো। টিভি রিপ্লে দেখা হলো বার বার। অনেক কোন থেকে দেখা হলো। তবে এক কথায় বল যে রোহিত শর্মার কোমড়ের ওপরে ছিল, তা মনে হয়নি। ঐ সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো নানা মুনির নানা মত। একপক্ষের দাবি, মনে হয়েছে বল রোহিত শর্মার কোমড়ের নিচে ছিল। আবার এক পক্ষ বলছে কোন অ্যাঙ্গেলে মনে হয়েছে বল কোমড় অবধী ছিল। কিস্তু যেহেতু আম্পায়ার্স কল নট ‘আউট।’ তাই থার্ড আম্পায়ারের কাছে সেটাই বাড়তি গুরুত্ব পেল। নো বলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলো। শতরান থেকে ১০ রান দূরে দাঁড়িয়ে নতুন জীবন পাওয়া রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি করে এবং ১২৭ রানের ইনিংস শেষে সাজঘরে ফিরলেন। শেষ পর্যন্ত ভারতের রান দাঁড়ালো ৩০২। এখানো অনেকের মত, রোহিত শর্মা তখন আউট হলে ভারতের স্কোর লাইন থাকতো ২৬০`র ভেতরে।

এরপরের ঘটনা আরও চাঞ্চল্যকর। সেটা বাংলাদেশ ইনিংসের ১৭ নম্বর ওভারে। দুই ওপেনার তামিম আর ইমরুল কায়েস ফিরে যাবার পর ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন সৌম্য সরকার আর মাহমুদউল্লাহ। জুটিতে ১০.২ ওভারে ৪০ রান যোগ হবার পর ভারতের পেসার মোহাম্মদ সামির খাট লেন্থের ডেলিভারিকে পুল করলেন মাহমুদউল্লাহ। বল চলে যাচ্ছিল মিড উইকেট সীমানার বাইরে। সীমানার ঠিক ওপরে দাঁড়িয়ে তা ধরে ফেললেন ভারতীয় ফিল্ডার শিখর ধাওয়ান। মনে হচ্ছিল তার পা সীমানার দড়ি স্পর্শ করেছে। একেক অ্যাঙ্গেলে একেক রকম মনে হল। একবার মনে হয় লেগেছে। আবার মনে হয় লাগেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আম্পায়ার যে সিদ্ধান্ত দিলেন, সেটাও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গেল।

এক ম্যাচে দুটি প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে। যার প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়লো ম্যাচের ওপর। খুব স্বাভাবিকভাবে উত্তেজানার পারদ ছড়িয়ে পড়লো ভক্ত ও সর্থকদের মধ্যে। পাকিস্তানি আম্পায়ার আলিম দার ও ইয়ান গোল্ড এবং টিভি আম্পায়ার এস জে ডেভিস রীতিমত জাতীয় ভিলেন হয়ে গেলেন। বাংলাদেশ ভক্তদের দাবি, ঐ দুই সিদ্ধান্ত খুঁটিয়ে দেখতে পর্যাপ্ত আধুনিক ও আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা ও উপকরণ থাকার পরও তার যথাযথ সদব্যবহার হয়নি। টিভি আম্পায়ার সব উপকরণ ব্যবহার না করেই আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন।

সেই থেকে টিম ইন্ডিয়াও অন্যরকম প্রতিপক্ষ হয়ে গেল বাংলাদেশের। তারপর থেকে ভারততের সঙ্গে ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। অন্যরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহাওয়া। এর মাঝে আবার গত বছর বিশ্ব টি-টোয়েন্টির গ্রুপ ম্যাচটিও অন্যরকম উত্তাপ ছড়ালো।

ভারতের মাটিতে ভারতীয়দের প্রথমবার হারানোর সুবর্ণ সুযোগ হলো হাতছাড়া। শেষ ওভারে ১১ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। হাতে ছিল চার উইকেট। দু`জন সেট ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ প্রথম তিন বলে ৯ রান তোলার পর যখন মনে হলো বিজয় সুনিশ্চিত, তখনই বিরাট ধাক্কা এসে লাগলো। ভারতীয় পেসার হার্দিক পান্ডিয়ার শেষ তিন বলে দুই রান করতে পারলেন না মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ। উল্টো ১ রানের দুঃখজনক হার হলো সঙ্গী।

২০১৬ সালের ২৩ মার্চ ব্যাঙ্গালোরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের ঐ ম্যাচ এখনো তাই আফসোস ও অনুশোচনার প্রতীক হয়ে আছে প্রতিটি বাংলাদেশ সমর্থকের মনে। প্রথমবার বিশ্বকাপের মত সর্ববৃহৎ আসরে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন ভঙের বেদনা আর পরের বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া- এ দুটি ঘটনা বাংলাদেশ সমর্থকদের মনে ভীষণ দাগ কেটে আছে। তার কিছুতেই ওই দুই ম্যাচের দুখ স্মৃতি ভুলতে পারেননা। ভারতের সঙ্গে খেলা হলেই ওই দুই পরাজয়ের যন্ত্রণা মাথা চারা দিয়ে ওঠে। তাই ভারত বাংলাদেশ ক্রিকেট লড়াইটি এখন বাংলাদেশ ভক্তদের কাছে অপ্রাপ্তি-অত্রিপ্তি কাটিয়ে প্রাপ্তির আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ্য। তাই ভারত-বাংলাদেশ খেলা মানেই অন্যরকম লড়াই। বাড়তি আকর্ষণ।

আগামী ১৫ জুন বার্মিংহামের এজবাস্টনে বাংলাদেশ-ভারতের সেমির লড়াই টাইগার ভক্তদের কাছে অন্যরকম ‘ ক্রিকেট যুদ্ধ।’ বাড়তি উৎসাহ। সাজ সাজ রব রব।