রাঙামাটিতে যুগলীগ নেতা নূরুল ইসলাম নয়ন হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়িদের বসতবাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। লংগদু উপজেলার তিনটিলা পাড়া ও মানিকজোড় ছড়া এলাকায় শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে।
গত বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল (কৃষি গবেষণা এলাকা সংলগ্ন) এলাকা থেকে নূরুল ইসলাম নয়নের লাশ উদ্ধার করা হয়। খাগড়াছড়ি জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর তার লাশ লংগদু উপজেলা সদরের বাত্যা পাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাশ নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে একদল দুর্বৃত্ত তিন টিলা পাড়া এলাকায় পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন লংগদু সদর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
নিহত নয়ন যুবলীগের লংগদু সদর ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালাতেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার বিভাগের সহ-সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, ‘বাঙালিদের মিছিল থেকে পাহাড়ি অধ্যূষিত তিন টিলা পাড়ায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে জনসংহতি সমিতির উপজেলা শাখার কার্যালয়সহ কমপক্ষে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। উপজেলার মানিকজোড় ছড়া এলাকায়ও ৫০টি ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও দক্ষিণ মানিকজোড় ছড়ার মাচ্ছ্যাপাড়া এলাকায় বাঙালিরা এখনও অগ্নিসংযোগ করছে।’ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
লংগদু থানার ওসি মোমিনুল হক বলেন, ‘সকালে বাঙালিরা মিছিল করার সময় উচ্ছৃংখল লোকজন পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে ইপাটকেল মারে। এক পর্যায়ে পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ থেকে ১২টি ঘর পুড়ে যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে।’
লংগদু উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা তাজউল ইসলাম বলেন, ‘লংগদুতে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে উত্তেজনা নিরসনের লক্ষে লংগদু উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’
এ দিকে পাহাড়িদের ঘরে অগ্নিকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে শুক্রবার বিকেলে বিক্ষাভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখা।
অপরদিকে নয়ন হত্যার প্রতিবাদে জেলা যুবলীগের উদ্যোগে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ-মিছিল ও সমাবেশে হয়েছে। মিছিলটি পৌরসভা চত্বর থেকে শুরু করে বনরুপার আলিফ মাকের্ট চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী। বক্তব্যে দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবউদল জব্বার সূজন, শহর যুবলীগের মোঃ আবুল খায়ের, শাওয়াল উদ্দীন, উদয় শংকর চাকমা প্রমুখ।
এছাড়া হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সকালে পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। সমবেশে বক্তব্যে রাখেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি নূরজাহান বেগম, বাঙালী ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম,বাঙালী ছাত্র পরিষদের পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম প্রমুখ।