আন্তর্জাতিক অঙ্গনের নিষেধাজ্ঞা ভয় উপেক্ষা করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির জন্য ইরান আরেকটি ভূগর্ভস্থ কারখানা তৈরি করেছে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দেশটির আধাসরকারি সংবাদ সংস্থা ফার্স এ তথ্য জানিয়েছে। এ নিয়ে তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির তিনটি কারখানা স্থাপন করল।
রেভল্যুশনারি গার্ডের বিমানবাহিনী শাখার প্রধান আমিরালি হাজিজাদেহ বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েক বছরে (রেভল্যুশনারি) গার্ডরা ইরানের তৃতীয় ভূগর্ভস্থ কারখানা নির্মাণ করেছে। নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা আরো বাড়াতে আমাদের জোরদার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ’
ইরান এমন এক সময়ে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র কারখানার তথ্য প্রকাশ করল, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানকালে ইরানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, ইরান মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদ ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। কেবল বিদেশ সফরকালে নয়, ক্ষমতায় বসার পর থেকেই তিনি ইরান ও ইরানের পরমাণু চুক্তির সমালোচনা করে যাচ্ছেন। দেশটির ওপর বিশেষ নজরদারির ঘোষণাও তিনি দিয়েছেন। মার্কিন প্রশাসন যা-ই বলুক, ইরানের পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গত সোমবারই বলে দিয়েছেন, ‘ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতির প্রয়োজন নেই। ’
ইরানের সুন্নি প্রতিবেশী ও ইসরায়েল তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে আঞ্চলিক হুমকি হিসেবে দেখছে। এ ব্যাপারে রেভল্যুশনারি গার্ড কর্মকর্তা হাজিজাদেহ বলেন, ‘আমাদের শত্রু আমেরিকা ও ইহুদিবাদী প্রশাসন আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ব্যাপারে ক্ষুব্ধ হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কারণ তারা চায়, ইরান দুর্বল হয়ে থাক। ’
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির লক্ষ্য অস্ত্র তৈরি, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সেটা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় বিশ্বশক্তি ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। একই বছর ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে কিছু ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। তাতে ভূগর্ভস্থ ঘাঁটিতে উেক্ষপণের জন্য প্রস্তুত করে রাখা ক্ষেপণাস্ত্র দেখানো হয় এবং বলা হয়, দেশজুড়ে স্থাপিত শত শত ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটির মধ্যে একটির চিত্র ফুটেজে তুলে ধরা হয়েছে। পরের বছর তেহরান দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় এবং জানায়, এগুলো ইসরায়েলে হামলা করতে সক্ষম। ইরানের দাবি, তাদের এ কার্যক্রম জাতিসংঘের নীতিমালা লঙ্ঘন করেনি। দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ২০১০ সালে পাস করা প্রস্তাবে বলা হয়, তেহরানকে আগামী আট বছর পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। রুহানি সরকার কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। হাজিজাদেহ বলেন, ‘প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ ও পরীক্ষার কাজ চলবে। ’
সূত্র: রয়টার্স।