Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

base_1489245036-5555

দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা স্থাপন নিয়ে চীনের সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। ক্রমবর্ধমান এ উত্তেজনা এবার আকাশসেবাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। এরই মধ্যে বেশকিছু আকাশসেবা সংস্থা চীন-দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সেবা বন্ধ করছে। এর চাপ পড়তে শুরু করেছে এ খাতের আয়ের ওপর। আকাশসেবার পাশাপাশি দুই দেশের ভ্রমণ ও পরিষেবা খাতেও এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খবর ব্লুমবার্গ।

chardike-ad

দক্ষিণ কোরিয়ার চেওংজু প্রদেশ থেকে চীনের হার্বিন, নিংবো ও জিনজিয়াং পর্যন্ত ফ্লাইট স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির আকাশসেবা সংস্থা এস্টার জেট। দুই দেশের সম্পর্কের অবনতির জের ধরে ১৫ মার্চ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ফ্লাইট বন্ধ রাখার কথা নিজস্ব ওয়েবসাইটে জানিয়েছে সংস্থাটি। কোরিয়ান এয়ারলাইনস কোম্পানির একটি ইউনিট সিউলভিত্তিক জিন এয়ার দক্ষিণ কোরীয় দ্বীপ জেজু থেকে সাংহাই ও জিয়ান পর্যন্ত ফ্লাইটগুলো পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। বিঘ্ন এড়ানোর জন্য প্রাথমিকভাবে বুকিং বন্ধ রাখছে সংস্থাটি।

এদিকে চীনের বৃহত্তম আকাশসেবা সংস্থা স্প্রিং এয়ারলাইনস ১৫ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত নিংবো-জেজু ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করেছে। এয়ারলাইনসটির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, পরিবর্তিত বাজার পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কোরিয়ার সাশ্রয়ী জেজু এয়ার জানিয়েছে, সংস্থাটির ইনার মঙ্গোলিয়ার অর্ডোস পর্যন্ত চার্টার ফ্লাইটের আবেদন বাতিল করে দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ।

চীনা কর্তৃপক্ষের দক্ষিণ কোরিয়ায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে আরোপিত প্রতিবন্ধকতা আকাশসেবা সংস্থাসহ ভ্রমণ সংস্থা, প্যাকেজ ট্যুর অপারেটরস ও ক্রুজের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপের হিসাব অনুসারে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার। এরই মধ্যে স্থানীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলোকে ১৫ মার্চ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ প্যাকেজ বিক্রি বন্ধের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছে চীনা ন্যাশনাল ট্যুরিজম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। রাষ্ট্র পরিচালিত কোরিয়া ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন গত সপ্তাহে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতি বছর কয়েক লাখ চীনা দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ করেন। গত বছর ৮০ লাখের বেশি চীনা দেশটিতে ভ্রমণ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার রিসোর্ট দ্বীপ জেজুর ৮৫ শতাংশ পর্যটক চীন থেকে আসেন।

চীন-দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা আকাশসেবার পাশাপাশি সমুদ্রে ক্রুজ পরিচালনাকারীদের ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার র্যয়াল ক্যারাবিয়ান ক্রুজ লিমিটেড জানিয়েছে, ১৭ মার্চের পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় পোর্ট কল বাতিল করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। ক্রুজ থামার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবর্তে জাপানের কয়েকটি বন্দর নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। ব্রিটিশ আমেরিকান ক্রুজ কোম্পানি কার্নিভাল করপোরেশন নিয়ন্ত্রিত কোস্টা ক্রুজগুলোও দক্ষিণ কোরিয়ায় পোর্ট কল বাতিল শুরু করেছে। এর পরিবর্তে জাপানে নোঙর করছে ক্রুজগুলো।

স্প্রিং এয়ারের মুখপাত্র বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মধ্যে চলমান পরিস্থিতির কারণে পর্যটন ও আকাশসেবা উল্লেখ্যযোগ্য মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ পরিস্থিতির কারণে ২৬ মার্চের পর ক্যারিয়ারের সময়সূচি সে অনুযায়ী সমন্বিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ২৬ মার্চের পর গ্রীষ্ম-হেমন্তকালীন ফ্লাইট মৌসুম শুরু হবে।

ব্যাপক মাত্রায় সেবা বন্ধ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দক্ষিণ কোরিয়ার টিকিট বিক্রি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের ইস্টার্ন এয়ারলাইনস করপোরেশন। এদিকে চীনে দক্ষিণ কোরীয় কনগ্লোমারেট লোটে মার্টের ব্যবসা বন্ধের প্রতিক্রিয়ায় বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকার বিদেশী কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ ও কার্যক্রম পরিচালনাকে স্বাগত জানায়। যতক্ষণ পর্যন্ত বিদেশী কোম্পানিগুলো চীনের আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করবে, ততক্ষণ সরকার এসব কোম্পানির আইনানুগ অধিকার এবং আইন অনুযায়ী স্বার্থ সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত।

উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি সঞ্চয়ের প্রতিক্রিয়ায় সম্ভাব্য আক্রমণ রোধে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি ক্ষেপণাস্ত্রবিরোধী ব্যবস্থা স্থাপন করছে যুক্তরাষ্ট্র। ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য জমি দিতে সম্মত জানিয়েছে লোটে গ্রুপ। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনে কোম্পানির ৫৫টি খুচরা দোকান বন্ধ করা হয়েছে বলে চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ কোরীয় কনগ্লোমারেটটি জানিয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। দেশটির মতে, এর ফলে এ অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তিত হবে।