Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গুন হে’র অভিশংসন সে দেশের কনগ্লোমারেটগুলোর ব্যবসায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। পর্যবেক্ষকরা এ মন্তব্য করেছেন। খবর ইয়নহাপ।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত গতকাল দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্কের অভিশংসনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আদালতের সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশের পর দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম কনগ্লোমারেটগুলোর শেয়ারসূচকের উত্থান ঘটে।

chardike-ad

পার্কের যে ঘটনার জের ধরে বিদায় নিতে হলো, দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম কনগ্লোমারেট স্যামসাংয়ের নাম তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে, স্যামসাংয়ের ভাইস চেয়ারম্যান লি জে ইয়োং পার্ক গুন হে’র বান্ধবী ছোয়ে সুন-সিলের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে ঘুষ দিয়েছেন। ছোয়ে সুন-সিলের অনৈতিক প্রভাব খাটানোর জের ধরে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট পার্কের অভিশংসনের সিদ্ধান্ত নেয়। ছোয়ে সুন-সিল ও লি জে-ইয়োং দুজনই বর্তমানে কারাগারে আটক ও বিচারাধীন রয়েছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালত পার্লামেন্টের অভিশংসন সিদ্ধান্ত অনুমোদন করলেও স্যামসাংয়ের শেয়ারমূল্যে তার কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষণার ২ ঘণ্টার পরও স্যামসাং গ্রুপের শেয়ারসূচক অপরিবর্তিত অবস্থায় ছিল। একইভাবে অপরিবর্তিত ছিল আরেক কনগ্লোমারেট হুন্দাই গ্রুপের শেয়ারসূচক।

ব্লুমবার্গ গ্যাডফ্লাইয়ের সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে এলজি গ্রুপের কিছু শেয়ারের দরপতন ঘটেছিল। তবে আদালতের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর পর এসব শেয়ার ঘুরে দাঁড়ায় এবং দিনের শুরুর পতনের অর্ধেকের বেশি ক্ষতি পুষিয়ে নেয়। পার্কের অভিশংসন-বিষয়ক অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ায় আরেক কোরীয় কনগ্লোমারেট এসকে গ্রুপের শেয়ারের দাম ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যায়।

korean companiesদক্ষিণ কোরিয়ার কনগ্লোমারেটগুলো সে দেশের কোসপি শেয়ার সূচকের ৫০ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। পার্কের বান্ধবীকে ঘিরে সৃষ্ট জটিলতার খবর প্রকাশ হয় অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে। তখন থেকে পুঁজিবাজারে এসব কনগ্লোমারেটের শেয়ারমূল্য অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে বেশি বেড়েছে। এতে বোঝা যায়, কোরিয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীরা পাক কুন হের বিদায় অথবা বাজারের পতনের আশঙ্কা আগেই কাটিয়ে উঠেছেন। বড় কনগ্লোমারেটগুলোর শেয়ার উল্লম্ফনে এটাও স্পষ্ট হয় যে, দক্ষিণ কোরিয়ার ছোট কোম্পানিগুলো সেভাবে ভালো করেনি।

প্রেসিডেন্টের অভিশংসন ও দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর করপোরেট বসের কারাবরণ যদি দক্ষিণ কোরিয়ায় বিনিয়োগকারীদের হতাশ না করে, তাহলে বুঝতে হবে সহজে সেখানকার বাজারে কোনো কাঁপন ধরবে না।

ব্লুমবার্গের সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের অভিশংসন দেশ দুটির শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করেছিল।

সিডনিতে এএমপি ক্যাপিটাল ইনভেস্টরসের শেন অলিভার বলেন, ‘ব্রাজিল অথবা ১৯৭৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোরিয়ার শেয়ারবাজারও এখনকার চেয়ে উপরে ওঠা উচিত। কেননা সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্ত মূলত প্রেসিডেন্ট পাক কুন হেকে ঘিরে সৃষ্ট জটিলতার অবসান ঘটিয়েছে। এতে কোরিয়া এখন স্পষ্টভাবে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারবে। দক্ষিণ কোরিয়াকে ঘিরে একমাত্র যে বিষয়টি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে সেটা হলো— উত্তর কোরিয়া পরিস্থিতি।’

দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট ডিসেম্বরে পার্ক গুন হে’র অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেয়। এর পর থেকে কোসপি সূচক ৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। একইভাবে ব্রাজিলের ইবোভেসপা সূচক গত ফেব্রুয়ারিতে বেড়ে গিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট জিলমা হুসেফের অভিশংসনকে ঘিরে সৃষ্ট নয় মাসের নাটকীয়তার অবসান ঘটে সেপ্টেম্বরে। এর পর থেকে ইবোভেসপা সূচক বাড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারি নাগাদ তা ২০১১ সালের সর্বোচ্চ সীমার তুলনায় ১৯ শতাংশ বেড়ে যায়।

সত্তরের দশকে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জেরে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার নাগরদোলার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছিল। প্রেসিডেন্ট পদে দ্বিতীয় দফায় রিচার্ড নিক্সনের বিজয়ের পর ১৯৭৩ সালে মার্কিন শেয়ারবাজার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। কিন্তু কয়েক মাসের মাথায় নিক্সন ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হন। এর পর থেকে মার্কিন শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক অবনমন শুরু হয়। ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে শেয়ারসূচক ১২ বছরের নিম্নতম অবস্থানে পতিত হয়। তবে পরবর্তী পাঁচ মাসে সূচক আবার ৩৫ শতাংশ বেড়ে যায়।

দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির অত্যন্ত নাজুক সময়ে পার্ক গুন হে’র অভিশংসনের ঘটনাটি ঘটল। সে দেশের বেশির ভাগ কনগ্লোমারেট সংকটে রয়েছে। হুন্দাই গ্রুপ টানা শ্রমিক ধর্মঘটে ভুগছে। লোটে গ্রুপ চীনের তোপে পড়েছে। স্যামসাং গ্রুপকে নোট-৭ স্মার্টফোনের কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছা দিতে হয়েছে। দক্ষিণ কোরীয় জনগোষ্ঠীর গড় বয়স বাড়ছে। টার্মিনাল হাই অল্টিচ্যুড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঘিরে চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। চীনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর বাণিজ্যিক চাপ বাড়তে পারে। আবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা আরোহণের জের ধরে দক্ষিণ কোরিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও সংরক্ষণবাদী তোপে পড়তে হতে পারে। এদিকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে। সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্তের পর দক্ষিণ কোরিয়াকে এখন আগামী ৬০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে নির্বাচন করতে হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কমিশনের চেয়ারম্যান ইম জয়-ইয়োং বলেছেন, পুঁজিবাজার সম্পর্কে স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং কর্মীদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। কোনো রকম সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে না। তাছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার আপৎকালীন প্রস্তুতি রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সামনে দৃষ্টি রেখে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের (কিটা) এক বিবৃতিতে বলা হয়, পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের পক্ষে ভোট হওয়ার পর থেকে আমাদের সমাজ বিভাজনের পেছনে অনেক শক্তি ব্যয় করেছে। সাংবিধানিক আদালতের সিদ্ধান্ত সব বিতর্কের ইতি টেনেছে। এখন সব নাগরিকের উচিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ চালিয়ে যাওয়া।