সাইবার যুদ্ধের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মধ্যে। চীনা হ্যাকারদের কোরীয় কোম্পানি লোটে ডিউটি ফ্রির ওয়েবসাইট ক্র্যাশের মধ্য দিয়ে যে সাইবার হামলার শুরু, তা-ই এখন যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে। চীনা হ্যাকাররা মার্কিন নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিবেশী দেশটির সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানির ওয়েবসাইটে হামলা অব্যাহত রেখেছে। সময়ের সঙ্গে এ হামলা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর কোরিয়া হেরাল্ড। দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যূহ স্থাপনার মধ্য দিয়ে ঘটনার শুরু। প্রতিবেশী দেশটিতে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই চীনের কাছে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির হ্যাকাররা দক্ষিণ কোরীয় বিভিন্ন কোম্পানিতে সাইবার হামলা করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার ৩০টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি কোম্পানি চীনা সাইবার হামলার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। এসব সাইটের মধ্যে এমনকি পিয়ংচ্রাং ২০১৮ অলিম্পিক ও ২০১৭ ডব্লিউটিএফ তায়কোন্দো চ্যাম্পিয়নশিপের ওয়েবসাইটও রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় ইংরেজি শিক্ষার সবচেয়ে জনপ্রিয় লিডারস এডুর ওয়েবসাইটটিও হ্যাক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বড় সাইবার হামলাটি হয়েছে এ মাসের শুরুতে। ওই সময় চীনা হ্যাকাররা দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় রিটেইলার লোটের ডিউটি ফ্রি শপের ওয়েবসাইটে হামলা করে। এতে করে প্রতিষ্ঠানটির কোরীয়, ইংরেজি, চীনা ও জাপানি ভাষার চারটি ভার্সনের ওয়েবসাইটই বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে চীনে লোটে মার্টকে প্রায় ৪ লাখ ৩১ হাজার ডলার লোকসান গুনতে হয়। এমনকি হামলার ব্যাপ্তি এতটাই ছিল যে, প্রতিষ্ঠানটি এর ওয়েবসাইট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে সময় এ প্রসঙ্গে লোটে মার্টের এক কর্মকর্তা বলেন, আবারো হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় আমরা আমাদের ওয়েবসাইট সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছি।
চীনে লোটেবিরোধী মনোভাব যদি কোরিয়াবিরোধী মনোভাবে রূপান্তর হয়, তাহলে আরো বেশকিছু কোম্পানিকে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ কোরীয় বিভিন্ন কোম্পানিতে চীনা হ্যাকাররা ক্রমাগত হামলা চালিয়ে এ আশঙ্কা সত্যে পরিণত করেছে। হ্যাকাররা সাধারণত দুভাবে এ হামলা পরিচালনা করছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এর সৌন্দর্যহানির মাধ্যমে তারা হামলা করছে। এতে করে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের অ্যাপিয়ারেন্স বদলে যায়। পাশাপাশি কন্টেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি ঘটানো হয়। ফলে ওয়েবসাইটটির নিয়মিত ট্রাফিক আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। এছাড়া আরেক ধরনের হামলা করা হয়, যাকে ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনাইয়াল অব সার্ভিস সংক্ষেপে ডিডস নামে অভিহিত করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন অনলাইন সার্ভিসের প্রাপ্যতায় ব্যাঘাত ঘটানো হয়। এ দুই ধরনের হামলাই করা হয় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়ানোর উদ্দেশ্যে। কোরিয়া ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইনফরমেশন সিকিউরিটির অধ্যাপক লিম জং-ইন বলেন, হ্যাকাররা যদি ব্যাংক, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন গণ- অবকাঠামোর ওপর হামলা শুরু করে, তাহলে এটি একটি বড় সংকটের সৃষ্টি করবে। এতে করে ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, যা দুই দেশকে সাইবার যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আর এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কোরিয়ার পক্ষে তা সামাল দেয়া কঠিন হবে। কারণ এক্ষেত্রে দক্ষ লোক ও সক্ষমতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে চীনের সাইবার নিয়ন্ত্রণ খাতে প্রায় এক লাখ দক্ষ লোক রয়েছে। এর বিপরীতে দক্ষিণ কোরিয়ায় মাত্র ৬০০-এর মতো দক্ষ জনবল রয়েছে। কোরিয়া ইন্টারনেট অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্সির ইন্টারনেট নিরাপত্তা কেন্দ্রের প্রধান জিওন কিল-সু বলেন, স্থানীয় বিভিন্ন ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ এবং হামলার ঘটনা দেখলে তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করা, এটুকুই এ মুহূর্তে আমরা করতে পারি। আগ বাড়িয়ে আক্রমণের সিদ্ধান্তের বিষয়টি রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আওতাধীন।