বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে সাড়ে ১৯ দিন সময় লাগে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে। এ সময় কমিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড (বিআইডিএ)। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে বিআইডিএর সমন্বয়ে ব্যবসা শুরুর এ সময় সাতদিনে নামিয়ে আনার জাতীয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া সহজীকরণের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে আজ থেকে। বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে এ সম্পর্কে প্রতি মাসে গণমাধ্যমকে অবহিতও করা হবে। রাজধানীতে গতকাল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে বিআইডিএ।
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিআইডিএ। এতে বিআইডিএ নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম ব্যবসা সহজীকরণ-বিষয়ক মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহ্মাদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আবুল কাশেম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পরাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জহির উদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইসুল আলম মণ্ডলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিআইডিএর নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চ আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। সেজন্য ২০২১ সালের পর মাত্র ২০ বছর সময় পাওয়া যাবে। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি। প্রয়োজন ব্যবসার পরিবেশ তৈরি। ব্যবসায়িক পরিবেশ বিরাজ করলেই বিনিয়োগ আসবে। এক্ষেত্রে দেশী-বিদেশী দুই ধরনের বিনিয়োগই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি নিশ্চিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাতিসংঘ ঘোষিত ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬তম। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এটি দুই ডিজিটে অর্থাত্ কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে আনতে হবে। এখানে ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি সময় লাগে। এর পর জমি অধিগ্রহণ, পরিবেশের ছাড়পত্র, গ্যাস-বিদ্যুত্ সংযোগসহ ১০ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় একজন ব্যবসায়ীকে।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, এখন থেকে ব্যবসা শুরু করতে মাত্র সাতদিন সময় লাগবে। আগে সাড়ে ১৯ দিন লাগত। অবকাঠামো তৈরির অনুমোদন পেতে আগে যেখানে ২৭৮ দিন লাগত, এখন তা ৬০ দিনে নামিয়ে আনা হবে। বিদ্যুত্ সংযোগ পেতে এখন সময় লাগবে মাত্র ২৮ দিন। এক্ষেত্রে আগে ৪০৪ দিন সময় লাগত। এছাড়া স্থাবর সম্পদের দলিল করে নামজারি করা, ব্যাংকঋণ পেতে সিআইবি প্রতিবেদন ও ব্যাংকঋণ পেতে কম সময় লাগবে। সংখ্যালঘুদের বিনিয়োগ সুরক্ষা দেয়া হবে। কমিয়ে আনা হবে ট্যাক্স দেয়ার সময় ও ব্যয়। সীমান্ত বাণিজ্য আরো সহজ করা হবে। আইনি জটিলতা কমাতে এ বিষয়ে আলাদা বেঞ্চ ও হাইকোর্ট ডিভিশন গঠন করা হবে। আর এ বিষয়ে প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে দিয়ে তা জনগণকে অবহিত করার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি ব্যবসা শুরু ও তা বর্ধিত করতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর ব্যবস্থাও নিয়েছে বিআইডিএ।
এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহ্মাদ বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা বারবার নীতি পরিবর্তন। কারণ একটা ব্যবসা বড় হতে দু-তিন বছর লাগে। এজন্য যেকোনো নীতি পরিবর্তনে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় দিতে হবে। আমরা বিদেশে গিয়ে বিনিয়োগকারীদের এ দেশে নিয়ে আসছি। কিন্তু তাদের ব্যবসার পরিবেশ দিতে না পারলে তা খুব খারাপ হবে। এটি তাদেরকে না আনার চেয়েও ক্ষতিকর।
ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) দিক থেকে এশিয়া বর্তমানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া চীন থেকে যেসব বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে, সেগুলো বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।