Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

base_1484853055-4

ভাগ্য ফেরানোর আশায় বিদেশে যাওয়া শ্রমিকের অনেকেই ফেরেন লাশ হয়ে। এতে অসহায় হয়ে পড়ে তাদের পরিবার। এসব বিবেচনায় বিদেশগামী ও প্রবাসী সব শ্রমিককে শতভাগ বীমার আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল এ বিষয়ে প্রথম বৈঠক করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

chardike-ad

বিদেশগামী ও প্রবাসী শ্রমিকদের শতভাগ বীমার আওতায় আনতে খসড়া নীতিমালা তৈরির জন্য একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে গতকালের বৈঠকে। এ উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন আইডিআরএ সদস্য কুদ্দুস খান। সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের (বিআইএফ) মনোনীত প্রতিনিধিরা। এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ডেপুটি সেক্রেটারিও এ উপকমিটিতে থাকবেন বলে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ঢালাওভাবে সব কোম্পানি নয়, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিই প্রবাসীদের বীমা সুবিধা দিতে পারবে। এক্ষেত্রে পলিসির নাম, ধরন ইত্যাদি নির্ধারণ করবে উপকমিটি। বর্তমানে বেশকিছু কোম্পানি প্রবাসীদের বীমাসেবা দিচ্ছে। তারা কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে, এর ওপর ভিত্তি করেই খসড়া নীতিমালাটি তৈরি করা হবে। তবে নীতিমালাটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তা অনুসরণ করতে হবে।

এ বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য কুদ্দুস খান বণিক বার্তাকে বলেন, বিদেশে বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে। এর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে অর্থনীতিতেও। কিন্তু সেই প্রবাসী শ্রমিকরাই বঞ্চিত। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রবাসীদের শতভাগ বীমার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে গতকাল আমাদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এর আগে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বীমা অনুমোদনের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু প্রক্রিয়াগত জটিলতাসহ কয়েকটি কারণে দীর্ঘদিন ধরে এ উদ্যোগ আটকে থাকে। ওই সময় এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি হয়েছিল। খসড়া নীতিমালায় এ বীমার আওতায় বীমাগ্রহীতাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি, বিদেশে মৃত্যুবরণকারী শ্রমিকের মরদেহ ফিরিয়ে আনা ও দাফন সম্পন্ন করা ছাড়াও পরিবারকে অর্থসহায়তা দেয়ার নিয়ম রাখা হয়। বীমার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় এক বছর, তবে তা নবায়নযোগ্য। চাকরির সময় বাড়ানো হলে নতুন করে আরেকটি বীমা করাসহ প্রিমিয়াম এককালীন পরিশোধের নিয়মও রাখা হয়েছিল খসড়া নীতিমালায়।

ওই খসড়া নীতিমালায় ক্ষতিপূরণের বিষয়ে বলা হয়, কোনো অভিবাসী শ্রমিক অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করলে পরিবার ১০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাবে। দুর্ঘটনায় কোনো বীমাগ্রহীতার মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে ১০০ শতাংশ। অসুস্থতা অথবা দুর্ঘটনা, দৃষ্টিশক্তি লোপ, উভয় পা, একটি পা একটি চোখ, একটি পা একটি হাত ও একটি হাত একটি চোখ হারালে বা দুর্ঘটনায় সম্পূর্ণ অক্ষম হয়ে পড়লেও ১০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে। এছাড়া স্থায়ী পঙ্গুত্ব ও শ্রমদানে সম্পূর্ণ অক্ষম ব্যক্তিদের দেশে ফেরানো বাবদ ৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। তবে বীমাকারী আত্মহত্যা করলে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে বিআইএ চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, বিআইএর পক্ষ থেকে এর আগেও এ-সংক্রান্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিছুদূর কাজ এগোলেও পরবর্তীতে তার আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। আশা করছি, এবার প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে বিষয়টি নিয়ে আর কোনো কালক্ষেপণ হবে না।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৫ সালে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছিল ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন বাংলাদেশীর। সে হিসাবে গত বছর চাকরি নিয়ে বিদেশগমন বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩১ শতাংশ।

২০১৬ সালে অতীতের যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি নারী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। গত বছর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৮ জন নারী কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৮। ২০১৬ সালে ওমানে সর্বোচ্চসংখ্যক ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৭ জন কর্মী গেছেন। কর্মসংস্থানের দিক থেকে এর পরই রয়েছে সৌদি আরব। দেশটিতে গত বছর ১ লাখ ৪৩ হাজার ৯১৩ জন কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। বণিকবার্তা থেকে নেওয়া।