উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া এখন অনেক পরিচিত নাম। স্কলারশীপের মাধ্যমে শতশত মেধাবী ছাত্রছাত্রী কোরিয়াতে পড়তে আসে। সেই সুযোগ নিয়ে একটি প্রতারক চক্র গত কয়েকবছর ধরে কোরিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসা কর্মী পাঠাতে সক্রিয়। গতবছর বাংলা টেলিগ্রাফ এই প্রতারক চক্র নিয়ে একটি রিপোর্ট করে। কিন্তু বন্ধ হয়নি প্রতারক চক্রের ফাঁদ। বিভিন্ন নামে তারা কোরিয়ার বেনামী দুই তিনটি ইউনিভার্সিটিতে প্রায় কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীকে ভর্তি করিয়েছে। যাদের মধ্যে ভিসা পেয়েছে একশ’র বেশি ছাত্রছাত্রী। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আট দশ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক চক্র। যাদের ভিসা হয়না তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় এডমিশন ফি বাবদ একটা নির্দিষ্ট ফি। যার ফলে তারা বিভিন্নভাবে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরাই এইসব প্রতারকদের শিকার হন।
প্রতারক চক্রের সদস্যরা Korean Education Center নাম দিয়ে সম্প্রতি আবারো শুরু করেছে প্রতারণা। ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে বিদেশ যেতে আগ্রহীদেরকে মূল টার্গেটে পরিণত করেছে প্রতারকরা। কোরিয়ায় ইপিএস ভিসা নিয়ে যারা আসতে ব্যর্থ তারাও টাকা খরচ করে কোরিয়া আসতে আগ্রহী। তারাও অনেকেই পড়েন এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে। তাদের ফেসবুক পেইজে গিয়ে দেখা যায় আগামী ১৩ ডিসেম্বর একটি সেমিনার করা হবে ঢাকায়। ব্লোজম হোটেলে দক্ষিণ কোরিয়ার খিয়ংসাং ইউনিভার্সিটি নামের একটি অখ্যাত ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত থাকবেন। ফেসবুকের একটি পোস্টে তারা লিখেছে ১০০% নিশ্চিত ভিসার কথা। বেশকিছু সুযোগ সুবিধার কথা লিখেছে পোস্টটিতে। কোরিয়ায় পড়াশোনা সম্পর্কে এই প্রতারক প্রতিষ্ঠানের ন্যুনতম ধারনা নেই তা বুঝা যায় তাদের পোস্ট থেকে। সেখানে তারা লিখেছে খিয়ংসাং ইউনিভার্সিটি কোরিয়ার টপ ইউনিভার্সিটি। এটি র্যাংকিং বিহীন একটি অখ্যাত ইউনিভার্সিটি। সেখানে লেখা হয়েছে পড়াশোনা শেষে স্থায়ীভাবে নাগরিকত্বে সুযোগ, এলজি, স্যামসাংসহ বড় বড় কোম্পানীতে ইন্টার্নশীপের সুযোগ, ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ ইত্যাদি। এইসবের কোনটারই বাস্তব কোন ভিত্তি নেই। কোরিয়ার প্রধান প্রধান ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীরা এইসব সুযোগ সুবিধা নিতে হিমশিম খায়।
এই প্রতারক চক্রের মাধ্যমে আসা অনেক ছাত্র বাংলা টেলিগ্রাফকে তাদের করুণ দশার কথা জানিয়েছেন। অনেকেই লজ্জায় মুখ খুলতে চান না। অনেকেই পড়াশোনা চালাতে না পেরে এখন অবৈধ হয়ে গেছে। মালয়েশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে অনেকেই কাজ করতে গেলেও কোরিয়াতে মূলত প্রকৃত ছাত্রছাত্রীরাই পড়াশোনা করতে আসে। স্কলারশীপ ছাড়া কোরিয়াতে পড়াশোনা একেবারেই সম্ভব না। প্রতারক চক্রকে থামাতে না পারলে হয়ত কোরিয়াতে প্রকৃত ছাত্রছাত্রীদের আসাটাও একদিন কঠিন হয়ে যাবে। বাংলাদেশে কোরিয়ান দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কিছু ভিসাও পেয়ে যায় এইসব প্রতারক চক্রের মাধ্যমে আবেদন করা ছাত্রছাত্রী। আর এইসব ছাত্রছাত্রী ভিসা নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করে ছাত্রছাত্রীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে।
‘দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষা’র নামে কোটি টাকার প্রতারণা
http://www.banglatelegraph.com/2015/10/%E0%A6%A6%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BF%E0%A6%A3-%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D/