Search
Close this search box.
Search
Close this search box.
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের অভিযোগ

রাখাইন প্রদেশে সাম্প্রতিক অভিযানের সময় মিয়ানমারের সৈন্যরা রোহিঙ্গা নারীদের নির্যাতন করেছে। রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। খবর রয়টার্স।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত সপ্তাহে রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় ব্যাপক ধরপাকড় চালায়। এ সময় একটি গ্রামের বেশকিছু নারীকে সৈন্যরা ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাখাইন প্রদেশের উ শে কেয়া গ্রামের আট নারী গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এ অভিযোগ করেন। এসব নারী তাদের বসতবাড়িতে সৈন্যদের অভিযান, সম্পদ লুট ও বন্দুকের মুখে ধর্ষণের সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন।

chardike-ad

বার্তা সংস্থা রয়টার্স নির্যাতনের শিকার তিন নারীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছে। বাকি পাঁচজনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। এসব আলাপে পৃথকভাবে সবক’টি অভিযোগের সত্যতা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। মোট কত নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাও জানা যায়নি।

চলতি মাসের গোড়ার দিকে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা গ্রুপ মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের কয়েকটি চৌকিতে হামলা চালায়। মিয়ানমার সরকারের অভিযোগ, হামলাকারীদের সঙ্গে বহির্বিশ্বের ইসলামপন্থী জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে। এ ঘটনার পর ৯ অক্টোবর থেকে রাখাইন প্রদেশের মংডু এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়। সৈন্যরা সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাতে থাকে।

সন্দেহভাজন জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে মিয়ানমার সরকার অভিযোগ করেছে, রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের একটি দল সীমান্ত চৌকিতে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এ দলে প্রায় ৪০০ সদস্য রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

জঙ্গিরা মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশের নয় সদস্য এবং পাঁচ সৈন্যকে হত্যা করেছে বলে সরকার অভিযোগ করেছে। এ সময় তারা বেশকিছু অস্ত্র লুট করে বলেও জানানো হয়েছে।

অভিযুক্ত দলটি এর আগে কয়েকটি ভিডিও বার্তায় নিজেদের আনসার আল-ইয়াকিন নামক দলের সদস্য বলে পরিচয় দেয়।

কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাখাইন প্রদেশের এ সংকট মিয়ানমারের নতুন সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশটির নেত্রী অং সান সু চি সেনাবাহিনীর ওপর কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সু চির সম্পর্ক টানাপড়েনে রয়েছে। ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে প্রণীত সংবিধানে সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। ওই সংবিধানে প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সেনাবাহিনীর হাতে রাখার বন্দোবস্ত রয়েছে।

মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মুখপাত্র জ তাই বলেছেন, যে গ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা লুকিয়ে রয়েছে, সেখানে ধর্ষণ করার কোনো উপায় নেই।

রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে জ তাই এক সামরিক কমান্ডারকে টেলিফোন করেন। জ তাই ওই কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করেননি। ওই কমান্ডার বলেছেন, সৈন্যরা ১৯ অক্টোবর উ শে কেয়া গ্রামে অভিযান চালায় এবং পরে গ্রাম ছেড়ে আসে। এ সময় কোনো রকম নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।

অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্যের অনুরোধ জানিয়ে সেনাবাহিনীকে ই-মেইল করে জবাব পাওয়া যায়নি।

সীমান্ত চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলে ‘অপারেশন জোন’ ঘোষণা করেছে। অভিযান চলাকালে সীমান্ত চৌকিতে হামলায় অভিযুক্ত ৩৩ জন নিহত হয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে স্থানীয় ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি।

রাখাইন প্রদেশের পুলিশপ্রধান কর্নেল সিন লিউয়িন এসব অভিযোগ ‘মুসলিম গোষ্ঠীগুলোর প্রচারণা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বণিকবার্তার সৌজন্যে।