শুরুর ফিল্ডিং, শেষের ব্যাটিং— দুই দলের মাঝে অনায়াসে তুলে দিল ব্যবধানের দেয়াল। প্রথম ম্যাচে রোমাঞ্চকর জয়ের পর ইংল্যান্ডের চোখ এখন সিরিজ জয়ে। অন্যদিকে স্বাগতিক বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি টিকে থাকার। আজ মাশরাফি বিন মর্তুজাদের হার মানেই এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয় ইংল্যান্ডের। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের বাঁচা-মরার ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ২টা ৩০ মিনিটে।
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ, এরই মধ্যে ১-০র ব্যবধানে এগিয়ে ইংল্যান্ড। সাম্প্রতিক সময়ে ইংলিশদের পারফরম্যান্স ঈর্ষণীয়। শেষ ১০ ম্যাচে আট জয়ের বিপরীতে একটি হার ও একটি টাই। সাফল্যধারা অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জস বাটলার, বেন স্টোকসরা। বাংলাদেশের কাছে গত বিশ্বকাপে হারের জ্বালা বাড়তি প্রণোদনা জোগাচ্ছে বাটলারদের।
অবশ্য প্রথম ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বকাপের প্রতিশোধের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক। প্রতিহিংসা নয়, প্রতিপক্ষের দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর মনোযোগ তার দলের। এমনকি তিনি একবাক্যে মেনে নেন এবারের সিরিজে বাংলাদেশই হট ফেভারিট। বলেন, ‘প্রতিশোধের কোনো বিষয় অনুপ্রেরণা হিসেবে নেই। এ মুহূর্তে স্কোয়াডে যারা আছেন, তাদের অনেকেই কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন না। প্রতিপক্ষের দক্ষতার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। দিন শেষে আসলে দেখতে চাই আমরা যেন নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পেরেছি। এটিই মসৃণ করবে আমাদের জয়ের পথ।’
বাটলারের সেই আশাবাদের সবটুকু বাস্তব রূপ নিয়েছে মিরপুরের প্রথম ম্যাচে। ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য টাইগারদের ২১ রানে হারিয়েছে তার দল। কিন্তু একটা সময়ে ম্যাচের ভাগ্য ঝুঁকেছিল বাংলাদেশের দিকে। সেখান থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাসটা যেন জানান দিচ্ছে, এই ইংল্যান্ড সহজে হার মানার নয়। একাধিক হার্ডহিটার আর অলরাউন্ডারের মিশেলে হালের ইংলিশ দলটি এক সমীহ জাগানো দল।
জয় জয় অবস্থানে থেকেও শেষ দিকের চাপে ঘরের মাঠে টানা ছয় ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখানো মাশরাফি ব্রিগেড এভাবে নুয়ে পড়বে, এমনটা ভাবতে পারেনি কেউই। ইংলিশ মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের এ হারকে দেখছে ‘অবিশ্বাস্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত’ হিসেবে। ব্রিটিশ পত্রিকা টেলিগ্রাফের শিরোনাম, ‘প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে হারাল ইংল্যান্ড। অভিষেকে অসম্ভব জয় ছিনিয়ে আনলেন জ্যাক বল।’ প্রতিবেদনের শুরুতে লেখা হয়েছে, ‘চার উইকেটে ২৭১ রান করে জয়ের দোরগোড়ায় ছিল বাংলাদেশ। গত দুই বিশ্বকাপে হারের দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে আনার পথে সাকিব আল হাসান ও ইমরুল কায়েস। ৩১০ রানের টার্গেট জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু এর পর যা ঘটল তা ছিল অপ্রত্যাশিত; এটি সম্ভব হবে বলে ভাবাই যায়নি।’ অন্যদিকে গার্ডিয়ান তো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘২৮৮ রানে গুটিয়ে গিয়ে জয়টি ইংল্যান্ডকে উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশের টেইলএন্ডারদের ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে তাদের দল জিতেছে, এ অভিমত ইংলিশ মিডিয়ার। আর দলের হারের জন্য স্বাগতিক অধিনায়ক মাশরাফির কাঠগড়ায় দলের ফিল্ডিং। সেই আফগানিস্তান সিরিজ থেকে ছন্নছাড়া ফিল্ডিংয়ের জন্য সমালোচিত হচ্ছে টাইগাররা। ১০ মাসের ব্যবধানে দলের ফিল্ডিংয়ে এতটা অবনমন অবিশ্বাস্য বলে মনে করছেন মাশরাফি। তার ভাষায়, ‘দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে ফিরলে ব্যাটিং কিংবা বোলিং বাজে হতে পারে। কিন্তু ফিল্ডিং তো বাজে হওয়ার কথা নয়। ফিটনেস থাকলেই এতে ভালো করা সম্ভব।’
ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং লাইনআপটাও ছিল বেশ নড়বড়ে। টপঅর্ডারে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান রানের মধ্যে থাকলেও মিডলঅর্ডারে ফর্মহীনতায় ভুগছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। আগের ম্যাচে তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও দিতে পারেননি আস্থার প্রতিদান।
একজন ফিনিশারের অভাব ফুটে উঠেছে তীব্রভাবে। তাই আজকের ম্যাচে এক সময় মি. ফিনিশার বিবেচিত নাসির হোসেনের খেলানোটা এখন জনদাবি। সেক্ষেত্রে নাসিরের সুযোগ কতখানি? এমন প্রশ্নে দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘টিম কম্বিনেশনের কথা মাথায় রেখেই নাসিরকে বাইরে রাখা হচ্ছে। দলে তিনজন একই ক্যাটাগরির ক্রিকেটার আছেন— মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও নাসির হোসেন। তিনজনই মিডলঅর্ডার কাম অফস্পিনার। যদি তিনজনকে একসঙ্গে খেলাই, তাহলে দলে বৈচিত্র্য কমে যায়।’
এদিকে স্বাগতিকদের বাড়তি দুশ্চিন্তার নাম লেগস্পিনার আদিল রশিদ। প্রস্তুতি ম্যাচে আদিলের পারফরম্যান্সটা নজরকাড়া না হলেও প্রথম ম্যাচেই দারুণ ঝলক দেখিয়েছেন এই লেগি। ৯ ওভারে ৪৯ রানের খরচায় শিকার করেন চার উইকেট। আজকের ম্যাচে আলাদাভাবে হিসাবের মধ্যে রাখতে হচ্ছে নবাগত মিডিয়াম পেসার জ্যাক বলকেও। অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নিয়ে গত ম্যাচে ইংলিশদের জয়ের নায়ক যে এই ২৫ বছর বয়সী পেসার।
সব মিলিয়ে আজ জয় পেতে হলে দুই দলকে প্রদর্শন করতে হবে নিজেদের সেরাটি। সেক্ষেত্রে স্বাগতিক বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ যেন একটু বেশি। সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক মাশরাফি জানিয়েছিলেন, নিজেদের সামর্থ্যটাকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জেতা সম্ভব। সিরিজের বাঁচা-মরার লড়াইয়ে টাইগারদের সামর্থ্যটা দেখাতেই হবে। কারণ এবার যে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।