id-card

শিক্ষার্থী অবস্থায় ২০০৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র পান সাদিয়া আফরোজ। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এ সময়ের মধ্যে তার স্থায়ী ঠিকানা, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে এসব তথ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধু সাদিয়াই নন, সারা দেশের অধিকাংশ ভোটারের ক্ষেত্রেই একই বাস্তবতা বিদ্যমান। এদিকে আগামী রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। আট বছর আগে দালিলিক প্রমাণ ছাড়াই করা জাতীয় পরিচয়পত্র শুধু মোড়ক পরিবর্তন করে ভোটারদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। সংশোধন প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় এতে আবারো ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

chardike-ad

নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে এ স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। উদ্বোধনের পর ওইদিন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের এ কার্ড দেয়া হবে। পরদিন থেকেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও কুড়িগ্রামের রৌমারীর দুর্গম এলাকার একটি চরে ভোটারদের মধ্যে এ কার্ড বিতরণ করা হবে। এর পর পর্যায়ক্রমে সারা দেশে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে তা বিতরণের কথা রয়েছে।

দেশে বর্তমানে ৯ কোটি ৬২ লাখ ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে ৯ কোটি ২০ লাখের মতো নাগরিককে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হয়েছে। এসব ভোটারকে জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে নতুন স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এদিকে ২০১৪ সালে হওয়া ৪২ লাখ ভোটারকে এখনো কোনো পরিচয়পত্র দেয়া হয়নি। নিবন্ধিত এসব নতুন ভোটারের কাছে থাকা স্লিপ জমা দিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কমিশনের সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, রোববার প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে কার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এর পর পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এ কার্ড বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, শুধু কার্ড বিতরণই নয়, একই সঙ্গে সবার ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবিও সংগ্রহ করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আট বছর আগে দেশে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়। এ তালিকায় ছিলেন ৮ কোটি ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৯৮ জন। সে সময় নাগরিকদের কাছ থেকে নাম, মা-বাবার নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রক্তের গ্রুপ, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানাসহ মৌলিক কিছু তথ্য নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এসবের বিপরীতে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেয়া হয়নি। ফলে দুই কোটিরও বেশি ভোটারের পরিচয়পত্রে তথ্যগত ভুল রয়ে যায়। এসব ত্রুটি সংশোধনের জন্য শুধু রাজধানীতে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হয়। ফলে ভোটারদের ভীষণ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন কার্যক্রম জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্থানান্তর করা হলেও কাজের মান নিয়ে অসন্তুষ্টি থেকে যায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে।

এদিকে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা। তারা জানান, রোববার উদ্বোধনের পর সোমবার থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণের কথা রয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। কমিশনের যাবতীয় ব্যস্ততা কার্ড বিতরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে। মাঠপর্যায়ে কার্ড বিতরণের ব্যাপারে এখনো কোনো সমন্বয় হয়নি। বাদ রয়েছে সারা দেশের বিতরণী কার্যক্রমের পরিকল্পনাও। কর্মকর্তাদের মতে, কার্ড সংগ্রহের জন্য শত শত মানুষ লাইনে দাঁড়াবেন। তখন একজন নাগরিকের ১০ আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি, পুরনো কার্ড জমা নেয়া ও নতুন কার্ড খুঁজে পেতে দীর্ঘ সময় লাগবে। নাগরিকদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। ফলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বাইরে আরো জনবল লাগবে। এ বিষয়ে এখনো কোনো  কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়নি।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের কাজে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় বা এতে কী ধরনের সমস্যা হবে, তা জানতে কোনো পাইলট প্রকল্প নেয়া হয়নি। সে কারণে শুধু রাজধানীতে সীমিত আকারে ওই কার্ড বিতরণ করে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। একটি নির্ভুল কার্ড প্রদানই কমিশনের লক্ষ্য।

তিনি জানান, ঢাকা শহরে ভোটার তালিকা ধরে এটি বিতরণ করা হবে। তাই কোনো সমস্যা হবে না। যেমন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ৯৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে ক্যাম্প করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডকে আগে থেকে জানিয়ে দেয়া হবে। সারা দেশে কার্ড বিতরণের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব নাগরিকের হাতে (যারা ভোটার হয়েছেন) উন্নত মানের এ কার্ড পৌঁছে দেয়া হবে। এ কার্ড সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে বিতরণ করা হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আট বছরের ব্যবধানে নিবন্ধিত ভোটারদের ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই পাল্টে গেছে। বিশেষ করে সে সময়ের তরুণ ভোটারদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বৈবাহিক অবস্থা, পেশা, বর্তমান ঠিকানা— এসব তথ্য স্বাভাবিকভাবেই পাল্টে গেছে। অনেকের মা-বাবার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এত দিন এসব তথ্য হালনাগাদ করার সুযোগ কেউ পাননি। এছাড়া পরিচয়পত্রে যাদের জন্মতারিখ ও নাম ভুল এসেছে, তা সংশোধনেও রয়েছে জটিলতা। জন্মতারিখ ও নাম সংশোধনে এসএসসি পাসের সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অলিখিতভাবে। এতে বিপদে পড়েছেন অনেক সনদহীন ব্যক্তি। এমনকি আদালতে গিয়ে এফিডেভিট করেও ভুল সংশোধন করা যাচ্ছে না।

২০০৮ সালে ভোটার তালিকা তৈরি ও ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কাজ শুরুর পর কিছুদিন ঢাকার কয়েকটি এলাকায় অনলাইনের মাধ্যমে এ-বিষয়ক তথ্য দেখার সুযোগ দেয়া হয়েছিল নাগরিকদের। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এসব তথ্য দেখা ও প্রয়োজনে তা সংশোধনের সুযোগ দেয়া হবে বলে সে সময় ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ডাটাবেজটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

বিষয়গুলো তুলে ধরে সংশোধিত জাতীয় স্মার্টকার্ড বিতরণের লক্ষ্যে গত মাসে ঢাকা জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশন বরাবর একটি চিঠি দেয়া হয়। কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, স্বাভাবিকভাবেই অনেক ভোটারের মৌলিক তথ্যের পরিবর্তন হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তথ্যগত ভুলও রয়েছে। এসব পরিবর্তন ও ত্রুটি সংশোধন না করলে আবারো ভোগান্তির সৃষ্টি হবে। এ কারণে জাতীয় সার্ভার বা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশোধিত তথ্য নিয়ে সর্বশেষ আপডেট কার্ড বিতরণ করা প্রয়োজন। তবে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ কমিশন নেয়নি।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, নির্ভুল ভোটার আইডি কার্ড তৈরিতে আমরা কাজ করছি। তথ্য পরিবর্তন ও ভুল-ত্রুটি সংশোধনে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নেয়া হবে।বণিক বার্তা ।