প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এমন কী সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে।
আজ সকালে এখানে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের খবর কি যমুনা নদীর স্রোতে ভেসে এসেছে।…এমন কী সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে যে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হবে।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানানোর জন্য জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
দেশে এখন সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বলবৎ থাকার কথা পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, যাতে কোনো মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এবারে তাঁর সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে অংশগ্রহণকে সফল এবং ফলপ্রসূ উল্লেখ করে এই অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করেছে বলেও মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে আমরা বাংলাদেশের এজেন্ডাগুলো জোরালোভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন ফোরামে আমাদের সক্রিয় এবং ফলপ্রসূ অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে বলে আমার বিশ্বাস।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধ্যবর্তী নির্বাচন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। তৃণমূল থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় দলের কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় কাউন্সিল (দলের) অনুষ্ঠিত হবে এবং এই কাউন্সিলররা নেতৃত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন সব সময় অনুষ্ঠিত হবে এবং তিনি মনে করেন, এ নির্বাচনের সঙ্গে দলের কাউন্সিলের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরো বলেন, ‘এটা আমাদের রুটিন কাজ এবং প্রতি তিন বছরে দলীয় কাউন্সিল হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, জরুরি অবস্থায় এবং সামরিক শাসনামলে দলের কাউন্সিল হয়নি। তিনি বলেন, ‘কিন্তু অন্য সময় আমরা নিয়মিত দলীয় কাউন্সিল করার চেষ্টা করেছি এবং আমরা সেই প্রস্তুতই নিচ্ছে।’
সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে বিএনপি ও কতিপয় অন্য দলের বিরোধিতা-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলের প্রবণতা হচ্ছে প্রতিটি কাজের বিরোধিতা করা এবং এ ব্যাপারে ভয়ের কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দল যথাযথভাবে তাদের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বিশেষ করে যারা সংসদে নেই এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, গত সাধারণ নির্বাচন বানচাল করতে যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে, ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়েছে এবং একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে; বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও ট্রাকে আগুন দিয়েছে, আপনি তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু আশা করতে পারেন না।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, গত নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করেছে। কিন্তু গত নির্বাচন বানচালে তারা তাদের প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘তারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং যারা মানুষ পুড়িয়ে মারায় বিশ্বাসী, তাদের কাছ থেকে আপনি ভালো কিছু আশা করতে পারেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকটি কারণে এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার মধ্যে প্রথমত, ইউরোপে চলমান শরণার্থী সংকট ও অভিবাসন সমস্যাসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর লাখ লাখ আশ্রয়প্রত্যাশীর সমস্যা। দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্যে আইএসসহ বিশ্বব্যাপী সহিংস জঙ্গি তৎপরতার উত্থান এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা। তৃতীয়ত, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ‘প্যারিস ক্লাইমেট ডিল’ অনুসমর্থনের বিষয়টি এবং চতুর্থত, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সম্বলিত ‘২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’-এর চূড়ান্ত অনুমোদনসহ আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুসমর্থনের বিষয়াবলি সংশ্লিষ্ট থাকা।
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে তাঁর সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে বিভিন্ন বৈঠক এবং বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি সাধারণ অধিবেশনে তাঁর প্রদত্ত বক্তৃতা সম্পর্কে বলেন, ‘সাধারণ পরিষদের বিতর্ক অধিবেশনে আমি প্রতিবারের মতো এবারেও মাতৃভাষা বাংলায় বক্তব্য রাখি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বক্তব্যে সাম্প্রতিক সময়ে অভিবাসন সংকট, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে জোরালোভাবে তুলে ধরি।’ তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমার সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনর্ব্যক্ত করি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসীদের পরামর্শদাতা, মূল পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহকারী এবং প্রশিক্ষকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।”
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ বিভিন্ন খাতে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিশ্রুত দেশগুলোর কাছে সহায়তার আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে অত্যন্ত জোরালো বলে আখ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী।
কানাডায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং নিউইয়র্কে নিজস্ব কনস্যুলেট ভবন নির্মাণে সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জাবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব আত্মজীবনী লেখার বিষয়ে আপাতত কোনো চিন্তাভাবনা নেই উল্লেখ করে তিনি নিজেকে জাতির পিতার কন্যা এবং ‘ফাদার্স ডটার’ হিসেবেই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চান এবং এটাকেই জীবনের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলেও উল্লেখ করেন।