ফেসবুকে শুধু ‘পপুলার’ হলেই হবে না, হতে হবে সেলিব্রিটি! গুনে গুনে পেতে হবে লাইক ও কমেন্ট। ফেসবুক খুললেই আপনার মুখ! এটাই যদি জীবনের একমাত্র মন্ত্র হয়, জেনে নিন কী কী করবেন বা করবেন না!
এক ঝলকেই…
ফেসবুক প্রোফাইলটা এমনভাবে সাজান, যাতে এক ঝলক দেখেই কারও ভাল লেগে যায়। মোদ্দা কথা হল, ফার্স্ট লুকেই বাজিমাত! ‘পিপ্ল ইউ মে নো’র মাধ্যমে কেউ যদি প্রোফাইলের খোঁজ পান, তিনি যাতে আর চোখ ফেরাতে না পারেন, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে। প্রথমত, প্রোফাইল পিকচার হতে হবে আকর্ষণীয়। দেখতে সুন্দর হলে তো কথাই নেই! না হলেও কিছু যায় আসে না। প্রোফাইল ছবিতে ‘এক্স ফ্যাক্টর’টা যেন থাকে। যে ছবিতে আপনাকে সবচেয়ে আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে, সেটাই বাছুন। মাথায় রাখবেন, প্রোফাইল ছবির ফ্রেমে দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি যেন না থাকে। আপনার ফেসবুক প্রোফাইল, আপনার পরিচয়!
পার্টি অ্যানিম্যাল
যাঁরা মডেলিং করেন বা মডেলিংকে পেশা হিসেবে নিতে চাইছেন— নিয়মিত পেজ থ্রি পার্টিগুলোয় যাওয়া শুরু করুন। এই ধরনের পার্টির আমন্ত্রণপত্র জোগাড় করা এমন কোনও কঠিন ব্যাপার নয়। দু’একবার পার্টিতে মুখ দেখানোর পর দেখবেন, পার্টির আমন্ত্রণ আপনার কাছে আপনা থেকেই আসতে শুরু করেছে। পরিপাটি হয়ে সেজে তবেই পার্টিতে যান। চুটিয়ে সেল্ফি এবং ছবি তুলুন। পেজ থ্রি পার্টিতে কোনও না কোনও সেলিব্রিটি আসেনই। তাঁদের সঙ্গেও সেল্ফি তুলুন। পরে সেই ছবি আপলোড করুন ফেসবুকে। মনে করলে, যে সেলিব্রিটির সঙ্গে ছবি তুলেছেন তাঁকেও ট্যাগ করতে পারেন। দেখবেন, এতে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়বে চড়চড়িয়ে। বেশি পোস্ট? নৈব নৈব চ!
এমন অনেকে রয়েছে, যারা প্রায় প্রতিদিনই ফেসবুকে ছবি আপলোড করে। অবিলম্বে এই অভ্যেস বদলানো প্রয়োজন। প্রোফাইলে আপলোড করা ছবি আপনার বন্ধু তালিকার সকলেই নিউজ ফিড’এ দেখতে পাবেন। যদি প্রতিদিন ছবি আপলোড করতে থাকেন, একটা সময়ের পর বন্ধুরা বিরক্ত হতে পারে। তাই আগে থেকে সতর্ক হওয়াই ভাল। নিয়মিত ছবি আপলোড করলে বেশি লাইক পাব— আদ্যিকালের এই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। সপ্তাহে দু’টো বা তিনটের বেশি ছবি একেবারেই আপলোড করবেন না। চেষ্টা করুন সপ্তাহের শেষে ছবি আপলোড করার। দেখবেন, বেশি লাইক পাচ্ছেন। কেন? তা বলার অপেক্ষা
রাখে না।
অ্যাপ কথা
ফেসবুকে যে বিভিন্ন অ্যাপ বা খেলা রয়েছে, সেগুলো নিয়ে চর্চা শুরু করুন। ফেসবুকে আপনার বেস্ট-ফ্রেন্ড কে? অথবা, আপনার কার প্রতি সিক্রেট ক্রাশ্ রয়েছে এই সব! এগুলো নিজের ফেসবুকের ওয়ালে শেয়ার করুন। খেলায় যার নাম উঠেছে তাকেও ট্যাগ করে নিতে পারেন। এতে আপনি এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারবেন। যাকে ট্যাগ করলেন, তিনি তো খুশি হলেনই। অন্যদিকে, সেই ব্যক্তির বন্ধুরাও আপনার প্রোফাইল দেখতে পেলেন। সেই সূত্রে নতুন কোনও বন্ধুত্বের অনুরোধ এলে, তাদের বন্ধু বানিয়ে নিন। এতে শুধু যে আপনার বন্ধুত্বের পরিসরটাই বাড়বে তাই নয়, বেশ কিছু লাইকের সংখ্যাও বাড়বে। নিশ্চিত!
বং কানেকশন
মেয়েরা স্টাইলিশ ছবি পোস্ট করুন। পার্টিতে গেলে গাউন পরতে পারেন। জিন্স-ক্রপ টপও চলতে পারে। পার্টিতে সাজগোজ করাটা মাস্ট। কিন্তু বাড়ির লক্ষ্ণীপুজোয় নিজেকে মেলে ধরুন সনাতনী সাজে। শাড়ি পরুন, কিন্তু ট্রেন্ড মেনে। ‘হিপ’ এবং ‘দেসি’— দু’রকম স্টাইলেই ছবি দিন। অন্যদিকে, ছেলেরা চেষ্টা করুন বাইক বা গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভের ছবি পোস্ট করতে। যাঁরা শরীরচর্চা করতে ভালবাসেন, তাঁরা জিমে কসরতের ছবি বা ভিডিও আপলোড করতে পারেন। শরীরের কোথাও যদি ট্যাটু থাকে, তা-ও ‘ফ্লন্ট’ করুন। পাশাপাশি, পুজো-পার্বণে রিপ্ড জিন্স ছেড়ে পরুন ধুতি পাঞ্জাবি। ছবি শুধু পোস্ট করার অপেক্ষা। তারপর দেখবেন, কেমন ঝড়ের গতিতে লাইক পড়ে!
ফেসবুক পেজ মাস্ট
বন্ধুর সংখ্যা পাঁচ হাজার পার হওয়ার দরকার নেই। তার আগেই খুলে ফেলুন একখানা ফেসবুক পেজ। পেজের লিঙ্ক শেয়ার করুন নিজের প্রোফাইলে। এবার কোনও ছবি পোস্ট করার হলে, সেটা ফেসবুক পেজে করুন। তারপর সেই ছবি শেয়ার করুন প্রোফাইলে। এতে আপনার ফ্রেন্ডলিস্টের বন্ধুরা ফেসবুক পেজের সন্ধান পেয়ে যাবেন। আর তাতেই বাড়বে লাইকের সংখ্যা। মনে করলে, দ্বিতীয় ফেসবুক প্রোফাইলও খুলতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রোফাইলের নাম একই রাখুন। শুধু নামের শেষে রোমান হরফে দুই লিখে দিন। ধরা যাক, আপনার নাম শ্রীময়ী মজুমদার। অথবা অম্লান পাত্র (উভয় নামই কাল্পনিক)। ফেসবুকে আপনার দ্বিতীয় প্রোফাইলের নাম দিন Srimoyee Majumder II অথবা Amlan Patra II ।
ট্রেন্ডি হতে হবে
এই মুহূর্তে ট্রেন্ড কোনদিকে, সেদিকে নজর রাখুন! তা সে ‘ডাবস্ম্যাশ’ হোক বা ‘প্রিজমা’। অথবা অন্যকিছু। ফেসবুকে কেউ আপনাকে চ্যালেঞ্জ করলে, তা-ও ফেরাবেন না। সাদা-কালো ছবির চ্যালেঞ্জের মতো আর কী! দেখবেন, এতে আপনার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। নিজেকে নিয়ে টুকটাক রসিকতাও করতে পারেন। তবে কোনও কিছুকেই বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে যাবেন না। ভারসাম্যটা বজায় রাখা জরুরি।
কাউকে ফেরাবেন না
কোনও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পেন্ডিং রাখবেন না। যারা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে, তারা বন্ধু হতে চায়। ধরে নেওয়া যেতে পারে, তারা আপনার পোস্ট বা ছবিতে কমেন্ট-লাইক করবে। তাই মোটামুটি ‘গ্রহণযোগ্য’ এমন কেউ বন্ধু হতে চাইলে ফেরাবেন না। উদারতার পরিণামে হয়তো একটু বেশিই মেসেজ পাবেন ইনবক্সে। তাতে কী? অপ্রয়োজনীয় মেসেজের উত্তর না দিলেই হল!
ট্যাগ একেবারেই নয়
বেশি লোককে ট্যাগ করলে লাইক এবং কমেন্টের সংখ্যা বাড়বে, অনেকের মনেই এই ভুল ধারণা রয়েছে। যদি কোনও গ্রুপ-ছবি আপলোড করেন বা কোনও পোস্ট বিশেষ কারও সঙ্গে শেয়ার করতে চান, তাহলেই ট্যাগ করুন। না হলে নয়। সকলকে অকারণে ট্যাগ করে, বিরক্তির পাত্র হয়ে উঠবেন না! অন্যদিকে কেউ ‘অর্থহীন’ কোনও পোস্টে ট্যাগ করলে, নিজেকে ট্যাগমুক্ত করে নিন। এতে প্রোফাইলে আপত্তিকর কিছু থাকবে না। টাইমলাইনে এমন কোনও ট্যাগ-পোস্ট রাখবেন না, যার সঙ্গে যুক্ত নন। প্রয়োজনে যারা ‘অর্থহীন’ পোস্টে ট্যাগ করছে, তাদের নিজের আপত্তির কথাটা মিষ্টি করে জানিয়ে দিতে পারেন!