‘এইডা কোনো কথা অইল। ঢাকা শহরে এত আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষী, অহনতো দেখি হাতে গুণা দশ-বারজন ছাড়া কবরে লাশ নামানোরও কেউ নাই। সকালে নামাজ পড়তে গিয়ে ইমাম সাহেবের মুখে হুনি একজন মারা গেছে। হেরে জিগাইয়া জানলাম আমার দুলাভাই মারা গেছে, অথচ আমিই জানি না। পরে দৌড় পাইরা কবরস্থানে আইলাম।’
মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টায় আজিমপুর পুরাতন কবরস্থানের জানাজা কক্ষের অদূরে দাঁড়িয়ে মগবাজারের জনৈক বিল্লাল আহমেদের লাশের কবর দিতে কম লোকের উপস্থিতিতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন মৃতের দূর সম্পর্কের এক শ্যালক। এ সময় গোরখোদকরা কোদাল উঁচিয়ে মাটি কেটে কবর খুঁড়ছিলেন।
অদূরে বেঞ্চে বসে থাকা একজন শ্যালককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মইরা গেলে মাটির দেহ’র এক টাকারও দাম নেই। বাড়ি গাড়ি জমি জমা কেউ সঙ্গী হয় না, সঙ্গী হয় শুধু আমল। বেশি বেশি দোয়া করেন। মুরদার আছান হইবো।’
আজিমপুর কবরস্থানের সিনিয়র মোহরার মিজানুর রহমানের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, আজ ঈদের দুদিনেও দুজনের লাশ দাফনের জন্য আনা হয়েছে। তিনি জানান, মরণের কোন ঈদ পূজা রোজার দিনক্ষণ নাই। এই কবরস্থানে ৩৬৫ দিনই লাশ আসে। আজ যে দুটি লাশ এসেছে দুটিই পুরুষ। একটি রাজধানীর মগবাজার ও অপরটি কামরাঙ্গীরচরের। দুজনেই বয়োবৃদ্ধ বলে তিনি জানান।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে অসংখ্য, মানুষ স্বজনদের কবর জিয়ারত করতে করতে ছুটে এসেছেন। স্বজনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ দোয়া দরুদ করছেন কেউ কান্নাকাটি করছেন আবার কেউবা দুহাত আল্লাহর দরবারে তুলে দোয়া পড়ছেন। ঈদে কবর জিয়ারত করতে আসা লোকজন দোয়া শেষে দান খয়রাত করে থাকে। দান খয়রাত পেতে আজ কবরস্থানের প্রবেশপথের আজিমপুর মাথা থেকে নিউমার্কেট গেট পর্যন্ত ভিক্ষুকদের রাস্তার দুপাশে বসে থাকতে দেখা যায়। অন্যান্য সময় নিউমার্কেটের পাশে কবরস্থানের গেটটি বন্ধ থাকলেও ঈদ উপলক্ষে দুটি গেটই খোলা রাখা হয়।
সরেজমিন পরির্দশনকালে আজিমপুর গেট থেকে কবরস্থানের মাঝামাঝি জানাজা ঘরের সামনে দেখা যায় কতগুলো বাঁশের টুকরা পড়ে আছে। একটু খেয়াল করতেই দেখা যায় একটি লাশ পশ্চিমমুখী করে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, কামরাঙ্গীরচরের কয়লাঘাট এলাকায় থাকতেন আনুমানিক ৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ। গোরখোদকরা বার বার লাশ দাফনের অনুরোধ জানাচ্ছিলেন। লোকজন কম থাকায় জানাজা পড়াতে দেরী করছিল তার মেয়ের জামাই রিকশা চালক আবুল। বেশ খানিকক্ষণ অপেক্ষার পর কবরস্থানে উপস্থিত এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজন জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে লাশ দাফনের জন্য যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন অদূরে বেঞ্চে বসে থাকা সেই লোক আবার বলে উঠেন ‘কবরই আসল ঠিকানা, বাকি সব মিছে মায়া।’ খবর- জাগোনিউজ।