Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

yeongju

কোরিয়ার ইতিহাসে অন্যতম সফল রাজা ছিলেন ২১ তম রাজা ইয়ঞ্জো। কোরিয়ান শাসকদের মধ্যে তার রাজত্বকালই সবচেয়ে দীর্ঘ। ১৭২৪ সাল থেকে ১৭৭৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫২ বছর তিনি কোরিয়া শাসন করেছেন। কনফুসিয়াসীয় ধর্ম মেনে চলতেন তিনি।

chardike-ad

তিনি কোরিয়ার ইতিহাসে একজন জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। ইতিহাসের অন্যতম ন্যায়বিচারক শাসকও ধরা হয় তাকে। তার সময়ে কোরিয়া শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষায় অনেক উন্নতি করেছিল। তবে এত কিছু ছাপিয়ে তিনি ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছেন তার ছেলেকে মেরে ফেলার জন্য।

রাজা ইয়ঞ্জোর দুজন ছেলে ছিল। প্রিন্স স্যাডো এবং প্রিন্স জাঞ্জিয়ন। এর মধ্যে প্রিন্স স্যাডো ছিলেন বড়। তিনি পরিচিত ছিলেন ক্রাউন প্রিন্স স্যাডো নামে। স্যাডো শব্দের অর্থ  যে দুঃখ নিয়ে চিন্তা করে। কিন্ত প্রিন্স তার নামের মত অন্যের দুঃখ নিয়ে চিন্তা করতেন না। তিনি হয়ে উঠেছিলেন অন্যদের দুঃখের কারণ। তার জন্ম ১৭৩৫ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি। এই প্রিন্স স্যাডোকে মেরে ফেলার জন্য রাজা ইয়ঞ্জো ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন। অবশ্য, এর পেছনে বড় একটা কারণও ছিল।

ইতিহাস বলছে যে, প্রিন্স স্যাডো ছিলেন মানসিকভাবে বিকৃত এবং অসুস্থ প্রকৃতির। খুন, ধর্ষণ, মদ্যপান এমন কোন অপরাধ নেই যে প্রিন্স করতেন না। তিনি ছিলেন “সিরিয়াল রেপিস্ট”। রাজপ্রাসাদের দাসীদের জোর করে ধর্ষণ করতেন তিনি। এমনকি প্রজাদের বাড়ি থেকে মেয়েদের তুলে এনেও ধর্ষণ করতেন প্রিন্স। কেউ তাকে বাধা দিলে তাকে খুন করতেও দ্বিধা করতেন না প্রিন্স স্যাডো। রাজপরিবারের সদস্য বলে কেউ প্রিন্সের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহসও পেত না। ফলে প্রিন্স একপ্রকার বাধাহীনভাবেই তার অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিল।

এক পর্যায়ে এসব কর্মকাণ্ডের কথা রাজা ইয়ঞ্জোর কানে যায়। রাজা বেশ রাগান্বিত এবং হয়ে পড়েন। কিন্ত রাজপুত্রকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে আইনি কিছু বাধা ছিল। কারণ, রাজপরিবারের কোন সদস্যকে সরাসরি শাস্তি দেয়া যেত না। রাজার চিন্তিত হওয়ার আরেকটি কারণ ছিল। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় প্রিন্স স্যাডোই রাজার মৃত্যুর পর  উত্তরাধিকারসূত্রে সিংহাসনে বসতো।

প্রিন্স স্যাডো রাজা হলে রাজ্য এবং প্রজাদের কি অবস্থা হবে ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন রাজা ইয়ঞ্জো। তাই, তিনি কিছু আইন সংশোধন করে প্রিন্সকে এক বিশেষ আদেশে বন্দী করার নির্দেশ দেন। ১৭৬২ সালের জুন মাসে তাকে আটক করা হয়।

এরপর তাকে একটি ৪X৪X৪ ফুট আয়তনের চালের গুদামঘরে বন্দী করে রাখা হয়। গুদামঘরটি ছিল কাঠের তৈরী। গুদামঘরটি ভাল করে সিল করে দেয়া হয়। যার ফলে বাইরে থেকে আল বাতাস ভেতরে ঢুকতে পারত না। বাইরে থেকে কোন প্রকার খাবারও দেয়া হত না। বন্দী করার ৮ দিন পর প্রিন্স মারা যায়।

মৃত্যুর ১৫ দিন পর তার মরদেহ বের করা হয়। প্রিন্স স্যাডোর ছোট ভাই জঞ্জিয়ন মরদেহ সমাহিত করেন।

রাজা ইয়ঞ্জো প্রিন্স স্যাডোর উপর এতটাই ক্ষিপ্ত ছিলেন যে, রাজ্যে প্রিন্সের নাম উচ্চারণ পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষনা করে দেন। এমনকি প্রিন্স স্যাডোর সন্তানরাও তাদের পিতার নাম হিসেবে প্রিন্স স্যাডোর নাম লিখতে পারত না। পিতার নাম হিসেবে লিখতে হত স্যাডোর ভাই প্রিন্স জঞ্জিয়নের নাম।

পরবর্তীতে অবশ্য প্রিন্স স্যাডোর সন্তানেরা পিতার নাম পরিবর্তনের বিষয়টা মেনে নেননি। তারা পিতার নামের জায়গায় প্রিন্স স্যাডোই লিখতে শুরু করেন। প্রিন্স স্যাডোর সন্তানদের মধ্যে পরবর্তীতে একজন রাজাও হয়েছিলেন। তার নাম ছিল জিওঞ্জো।

রাজা ইয়ঞ্জো মারা যান ১৭৭৬ সালে। তার মৃত্যুর পর জঞ্জিয়ন তার স্থলাভিষিক্ত হন। এর কয়েকবছর পর প্রিন্স স্যাডোর স্ত্রী লেডি হেইজিয়ং গুজব ছড়াতে শুরু করেন যে, তার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন না। তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয় হেইজিয়ং রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্যই এরকম গুজব ছড়িয়েছিলেন।

প্রিন্স স্যাডোর পিতা রাজা ইয়ঞ্জো ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন তার ছেলের অন্যায়ের বিচার করার জন্য। একজন বাবা হিসেবে ক্ষমতা থাকার পরও তার ছেলেকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছিলেন,এটাই তাকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।