samsung_crownহ্যান্ডসেটের বৈশ্বিক বাজারে শীর্ষ ব্র্যান্ড স্যামসাং। তবে বাংলাদেশে কোম্পানিটি শীর্ষস্থান হারিয়েছে কয়েক বছর আগেই। বাংলাদেশে হ্যান্ডসেটের বাজারে স্যামসাংয়ের দখল এখন ১০ শতাংশের নিচে। মূল ব্যবসা সংকুচিত হয়ে আসায় বাংলাদেশে জনবলও ছোট করে আনছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। নানা কারণ দেখিয়ে সম্প্রতি স্যামসাং বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ছয় কর্মকর্তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

২০১০ সালে বাংলাদেশে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আরঅ্যান্ডডি) সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে স্যামসাং। প্রাথমিকভাবে কয়েকজন প্রকৌশলী নিয়ে যাত্রা হলেও পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বাড়ানো হয়। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি স্যামসাং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ লিমিটেডে প্রকৌশলীর সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে ৬০০তে। স্যামসাং বাংলাদেশ প্রধানত কাজ করে মোবাইল নিয়ে। যদিও কিছু টেস্টিং, আইওটি, স্মার্টটিভি, অ্যালগরিদম উন্নয়ন, ইমেজ প্রসেসিং ইত্যাদি কাজও হয়।

chardike-ad

তবে ২০১৪ সালের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী স্যামসাংয়ের হ্যান্ডসেট ব্যবসায় মন্দা দেখা দিতে শুরু করে। এ সময় নানা অনিয়মের অভিযোগও ওঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। মুনাফা কমতে থাকায় ব্যয়সংকোচনের দিকে ঝুঁকে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। দুটি আরঅ্যান্ডডি সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় বেশকিছু কর্মীকে। বাংলাদেশে স্যামসাংয়ের আরঅ্যান্ডডি সেন্টারের অনেকগুলো কাজ ভারত ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করা হয়। এসআরবিডির প্রকৌশলীদের বাধ্যতামূলক অবসরের প্রক্রিয়াও শুরু হয় একই বছর। এর ধারাবাহিকতায় জনবল কমিয়ে আনার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করেছে স্যামসাং বাংলাদেশ। সম্প্রতি নানা কারণ দেখিয়ে স্যামসাং বাংলাদেশের হেড অব মোবাইল হাসান মেহেদীসহ শীর্ষপর্যায়ের ছয় কর্মকর্তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।

জানা গেছে, স্যামসাংয়ের বিশেষ এক নিরীক্ষায় বেশকিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির বিধিনিষেধ যথাযথভাবে অনুসরণ না হওয়ায় এসব অসঙ্গতি চিহ্নিত করা হয়। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে স্যামসাং বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন ছয় কর্মকর্তাকে পদত্যাগের নির্দেশনা দেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগে বাধ্য হন তারা।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাকরি ছেড়ে যাওয়া এক কর্মকর্তা জানান, অনিয়মের অভিযোগ সত্য নয়। বরং স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন তারা। স্যামসাং বাংলাদেশের শীর্ষপর্যায়ের একটি পদে যোগ দিচ্ছেন নতুন এক কর্মকর্তা। কোরীয় ওই নাগরিক পুরনোদের রাখতে আগ্রহী নন। এছাড়া চাকরি-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জটিলতাও তৈরি হয়েছিল। এজন্য আগেভাগেই চাকরি ছেড়েছেন তারা।

জানা গেছে, চলতি মাসের শুরু থেকে এ পদত্যাগ কার্যকর হয়েছে। জুনের ৩০ তারিখ পর্যন্ত অফিস করেছেন পদত্যাগ করা কর্মকর্তারা। পদত্যাগী কর্মকর্তাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে স্যামসাং বাংলাদেশে কাজ করছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্যামসাং বাংলাদেশের মুখপাত্র ও মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক হাবিব হাসান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে কর্মরত প্রতিভাবান কর্মীদের নিয়ে স্যামসাং গর্বিত। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের পেছনে রয়েছেন আমাদের কর্মীরা। কর্মীদের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশের জন্য সব রকম পদক্ষেপ আমরা নিশ্চিত করি। ব্যবসার সাধারণ নীতি অনুযায়ী, কখনো কখনো আমাদের সহকর্মীরা নতুন কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমরা তাদের অবদান স্বীকার করি ও তাদের ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই।’

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে টিভি, স্মার্টফোন, পরিধানযোগ্য ডিভাইস, ট্যাবলেট, ক্যামেরা, ডিজিটাল অ্যাপ্লায়েন্স, প্রিন্টার, মেডিকেল সরঞ্জাম, নেটওয়ার্ক সিস্টেম, সেমিকন্ডাক্টর ও এলইডি সলিউশনে বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে স্যামসাং ইলেকট্রনিকস কোম্পানি লিমিটেডের। স্মার্টহোম ও ডিজিটাল হেলথ ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারনেট অব থিংসে (আইওটি) অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বিশ্বজুড়ে ৮৪টি দেশে ৩ লাখ ২০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। বৈশ্বিকভাবে স্যামসাংয়ের বার্ষিক আয় ২৫০ বিলিয়ন ডলার। বণিকবার্তা।