২০১৫ সালে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গৃহযুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। গত বছর বিশ্বজুড়ে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬ কোটি ৫৩ লাখ। এক বছরে তাদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখের বেশি। জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি মিনিটে ২৪ জন মানুষ তাদের বাসস্থান হারাচ্ছেন। খবর বিবিসি ও এএফপি।
যুদ্ধের কারণে বাসস্থান হারানো মানুষের সংখ্যা এবারই প্রথম ছয় কোটি ছাড়াল। গত বছর বিশ্বে প্রতি ১১৩ জন মানুষের মধ্যে একজন হয় শরণার্থী অথবা নিজ দেশের ভিতরেই বাস্তুচ্যুত ছিলেন। এসব মানুষের অধিকাংশই যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী এ ধরনের মানুষের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৯৫ লাখ। কঠোর বৈদেশিক আইন ও বিদেশ সম্পর্কে ভয় বাস্তুচ্যুতদের দুর্দশা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ইউএনএইচসিআর। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে গতকাল সংস্থাটির ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের এ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়েছে সিরিয়া, আফগানিস্তান ও সোমালিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধকে। সারা বিশ্বে এ ধরনের মানুষের অর্ধেকের বেশিই (৫৪ শতাংশ) এ তিন দেশের নাগরিক। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, নিজেদের বাসস্থান হারিয়েছে, এমন মানুষের মধ্যে ২ কোটি ১৩ লাখ শরণার্থী। এদের মধ্যে অর্ধেকেরই বয়স ১৮ বছরের কম।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘শরণার্থী ও অভিবাসীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের তীরে এসে হাজির হচ্ছে। তারা যে বার্তা নিয়ে এসেছে তা হলো, সমস্যার সমাধান না করে ফেলে রাখলে তা একসময় আপনার সামনে এসে হাজির হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটি খুবই বেদনাদায়ক যে, বিষয়টি অনুধাবন করতে ধনী দেশগুলোর নাগরিকদের এত দীর্ঘ সময় লেগে গেল। এ মুহূর্তে আমাদের দরকার সংঘাত বন্ধের রাজনৈতিক পদক্ষেপ। শরণার্থীর স্রোত বন্ধ করতে এটিই হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধ।’
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয় হলো ইউরোপের শরণার্থী সমস্যা। গত বছর ১০ লাখের বেশি শরণার্থী জীবন বাজি রেখে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। তাদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছিল জার্মানি ও সুইডেনের মতো ইউরোপের উত্তরাঞ্চলীয় দেশগুলো। তবে ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের ৮৬ শতাংশ শরণার্থী নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে। তাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে তুরস্ক। দেশটিতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ লাখ। এর পরের দুটি স্থানে রয়েছে পাকিস্তান ও লেবানন।
এদিকে মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর চলমান নির্যাতন একসময় মানবতাবিরোধী অপরাধে রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সোমবার প্রকাশিত দেশটির মানবাধিকার-বিষয়ক একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ ধরনের অপরাধের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা, জোরপূর্বক কাজে বাধ্য করা ও যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনাও দেখা যেতে পারে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর থেকে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের কট্টর জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ সংগঠনগুলোর বিদ্বেষাত্মক আচরণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।