প্রবাসী বাংলাদেশিদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এবার দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার কথা চিন্তা করছে সরকার। এই ভাবনার বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় একটি পরিকল্পনাও প্রস্তুত রেখেছে।
প্রচলিত আইনে সংশোধন এনে হলেও প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্প্রতি মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রবাসীদের দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ বা সংশোধনের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে মতামত চায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবার এ বিষয়ে ইসির মতামত চাইলে প্রচলিত আইনে বাধা না থাকলে প্রবাসীদের এনআইডি দিতে কোনো অসুবিধা নেই বলে জানায় ইসি সচিবালয়।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় শাখার সিনিয়র সহাকারী সচিব ড. ফারুক আহাম্মদ গত ২৫ মে পররাষ্ট্র সচিবকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, ‘আগামী ২৬ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৬ অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে আলোচনার জন্য জেলা প্রশাসক বা বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সম্ভাবনা, সমস্যা ও সুপারিশমালা প্রেরণ করা হলো’।
ওই চিঠির সঙ্গে প্রবাসীদের এনআইডি প্রদান বা সংশোধন সংক্রান্ত প্রস্তাবটি সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি করেছেন ঢাকা’র জেলা প্রশাসক। যেখানে বলা হয়েছে, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি প্রাপ্তি বা সংশোধনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এসে আবেদন করতে হয়। এতে তাদের প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় হয়। তাই বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান বা সংশোধন করা যেতে পারে’।
ড. ফারুক আহাম্মদের পাঠানো চিঠিতে পররাষ্ট্র সচিবকে সংযুক্ত প্রস্তাবটির উপর মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে।
এই অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রবাসীদের এনআইডি সরবরাহ ও সংশোধন সেবা দেওয়ার বিষয়ে অভিমত চেয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয়টির কন্স্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. ল্যুৎফর রহমানের স্বাক্ষরিত ইসি সচিব সিরাজুল ইসলামকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে- ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলনের আলোচনা সূচিতে প্রবাসীদের এনআইডি সরবরাহের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আলোচ্য সূচিতে বলা হয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এসে আবেদন করতে হয়। এতে প্রবাসীদের প্রচুর অর্থ এবং সময় ব্যয় হয়। এই মর্মে সুপারিশ করা হয়েছে যে, বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান বা সংশোধনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেহেতু ওই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন সেহেতু বিষয়টির উপর নির্বাচন কমিশনের অভিমত প্রয়োজন’।
এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছি। দূতাবাসগুলোতে পাসপোর্ট যেভাবে করা হচ্ছে, সেভাবেই করা যেতে পারে। অর্থাৎ প্রবাসী বাংলাদেশিরা সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসেই ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ, আঙ্গুলের ছাপ প্রদান ও ছবি তোলার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। যা পরবর্তীতে অনলাইনে ইসিতে পাঠিয়ে দিলে আমরা তা যাচাই করে দেখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ভোটার করে নিতে পারি। আর তার জাতীয় পরিচয়পত্র পাঠিয়ে দিতে পারি।
তবে যেহেতু জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন, ভোটার নিবন্ধন আইনের আলোকেই করতে হয়, সেহেতু কিছু আইনি জটিলতা দেখা দেবে। কেননা, আইনে ভোটার হতে হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় ভোটার হতে হয়। যেখানে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাই নিবন্ধন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে বিদেশে প্রবাসীদের এনআইডি প্রদানের জন্য আইনে কোনো নিবন্ধন কর্মকর্তার কথা বলা হয়নি। তাই আমাদের পরিকল্পনাটির ওপর নির্বাচন কমিশন আইন দেখে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে।
এছাড়া আরেকটি পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। সেটি হচ্ছে ভোটার নিবন্ধন নয়, বরং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। তাহলে আর কোনো সমস্যা হবে না বলে্ও জানান এনআইডি মহাপরিচালক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কী অভিমত দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করে নিতে বা এনআইডি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আইন দেখেই নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। তবে একথা ঠিক, আমরা অনলাইন সেবা চালু করেছিলাম প্রবাসীদের কথা মাথায় রেখেই।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে।