সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে। যে কারণে প্রাচীনকাল থেকেই সমুদ্রতীরবর্তী মানুষদের জন্য ঘূর্ণিঝড় এক আতঙ্কের নাম। সুমদ্রের ৫০ মিটার কিংবা তার অধিক গভীর অঞ্চলে পানির তাপমাত্রা যখন ২৭ ডিগ্রীর অধিক হয় এবং পৃথিবীর ঘুর্ণনের কারণে সৃষ্ট কোরিওলিস শক্তির প্রভাবে কোনো অঞ্চলের বাতাস সোজা প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বেঁকে যায় তখন ওই অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলের নিম্ন ও মধ্যস্তরের অধিক আদ্রতার কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।
ঘূর্ণিঝড়গুলোর উৎপত্তি এবং অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন নাম থেকে। যেমন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে ঘূর্ণিঝড়গুলোর উৎপত্তি তাদের ‘সাইক্লোন’ বলা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় ‘টাইফুন’। আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকার ঘূর্ণিঝড়গুলোকে বলা হয় ‘হারিকেন’।
তবে অনেক সময় স্থানীয় ঘূর্ণিঝড়গুলোর বিভিন্ন নাম করা হয়। আবহাওয়া স্টেশনগুলো থেকে সংগৃহীত ঝড়ের তথ্য সবাইকে জানানো, সমুদ্র উপকূলে সবাইকে সতর্ক করা, বিভিন্ন সংকেত এবং জলযানগুলোর জন্য ঝড়ের খবর খুব সহজভাবে আদান-প্রদান করার জন্যই মূলত ঝড়ের নামকরণ করা হয়ে থাকে। নামকরণ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীনে বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটি। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (World Meteorological Organization) এই আঞ্চলিক কমিটি তৈরি করে সমুদ্রের ওপর ভিত্তি করে। যেমন, উত্তর ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সব ঝড়ের নামকরণ করবে WMO-এর ৮টি সদস্য রাষ্ট্র : বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, থাইল্যাণ্ড এবং ওমান। এদের একত্রে ‘স্কেপে’ বলা হয়।
তবে ঝড়ের অনেক আগে থেকেই নামগুলো ঠিক করে রাখা হয়। আগে ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ঝড়গুলোর নাম হতো সন্তদের নামে, যেমন সান্তা আনা, স্যান ফেলিপ (১ম), স্যান ফেলিপ (২য়)। এরপর ঝড়ের নামকরণ করা হতো অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে মানুষের কাছে এইসব নাম একটু বেশিই জটিল শোনায়। তাত্ত্বিক এসব নামের চেয়ে সংক্ষিপ্ত, সুনির্দিষ্ট নামকরণ লিখিত বা মৌখিক যে কোনো যোগাযোগে অধিকতর সহজ। ফলে এ ধরনের নাম ব্যবহার যুক্তিযুক্ত। যেমন ৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৭২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের ঝড়টি এখন মিয়ানমারের দিকে ধেয়ে আসছে বলার চেয়ে, ঘূর্ণিঝড় ‘হেলেন’ ধেয়ে আসছে বলা অনেক সহজ এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে দ্রুত সহায়ক। তাই ২০০০ সালে স্কেপের প্রস্তাবানুযায়ী প্রতিটি দেশ থেকে ১০টি করে নাম জমা নেওয়া হয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করার জন্য। এখান থেকেই পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ করা হয়।
একেকটি ঝড় বাস্তবে সৃষ্টি হলে, তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নাম নির্বাচন করা হয়। ইতিপূর্বে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আবহাওয়াবিদরা অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছেন মেয়েদের নামানুসারে। যেমন ক্যাটরিনা, নার্গিস, সিডর, রেশমী, বিজলি। তবে ঝড় যেহেতু মৃত্যু ও ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত, তাই কোনো নাম পুনরায় ব্যবহার করা হয় না।