Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

Sadiq Khanআট ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম তিনি। বাবা বাস চালাতেন। মা করতেন কাপড় সেলাইয়ের কাজ। দুজনের সীমিত আয়ের মেলবন্ধনে তার ও ভাইবোনদের বেড়ে ওঠা। কাউন্সিল এস্টেটের ছোট্ট বাসা। সেখানেই উচ্চাভিলাষের সঙ্গে কর্মজীবী মানুষের ঘরকন্না।

সত্তরের দশকের লন্ডনে বর্ণবাদীরা সংখ্যায় কম ছিল না। আসা-যাওয়ার পথে ও স্কুলে বহুবার তাকে বর্ণবাদী কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। শারীরিক আক্রমণও সয়েছেন। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে ওই বয়সেই বেছে নেন বক্সিং। মোহাম্মদ আলী ক্লে তখন নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তার ও অনেকের চোখে প্রেরণার উত্স।

chardike-ad

কটাক্ষ ও আক্রমণের মুখে বেড়ে ওঠায় সাদিক আমান খানকে নিজের কথা প্রকাশের চর্চাটি রপ্ত করতে হয়েছে। এ কাজে তাকে আরো শানিত করেছে আইনশাস্ত্রের পড়াশোনা। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় তিনি ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডন থেকে আইনশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পর যোগ দেন তার মতো অন্য মানুষের পক্ষে কথা বলার কাজে। ১৯৯৪ সাল থেকে ওয়েন্ডসওয়ার্থ বরোয় মানবাধিকার-বিষয়ক কৌঁসুলির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

মানুষের সঙ্গে সংযোগের কাজটি বহতা নদীর মতো। যত দূর পথচলা, ততই বাড়ে সঞ্চয়। মানবাধিকার-বিষয়ক কৌঁসুলি হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা তাকে আরো বৃহত্তর পরিসরে সোচ্চার হতে প্রণোদিত করে। তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০০৫ সালে লেবার পার্টির প্রার্থী হিসেবে টুটিং এলাকার এমপি নির্বাচিত হন। এর পর শুধুই এগিয়ে যাওয়ার গল্প।

২০০৮ সালে গর্ডন ব্রাউন মন্ত্রিসভায় তিনি পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। টোরি পার্টি ক্ষমতাসীন হলে ২০১০ সালে তিনি ছায়া মন্ত্রিসভায় আইন ও অর্থ-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ২০১৩ সালে তিনি ছায়া মন্ত্রিসভার লন্ডন-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৫ সালের মে মাসে ওই পদে ইস্তফা দেন। উদ্দেশ্য ছিল লন্ডনের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন। সেপ্টেম্বরে লেবার পার্টি তার মনোনয়ন নিশ্চিত করে।

বিশ শতক পেরিয়ে এসেও অনেকে অতীতে আশ্রয় নিতে চান। সাদিক খানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীও তা-ই চেয়েছিলেন। তার ধর্মীয় পরিচয়টি সামনে এনে জল ঘোলা করার চেষ্টা চালান টোরি প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথ। লন্ডনের হিন্দু, শিখ ও তামিল ভোটারদের বাড়িতে লিফলেট পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, সাদিক খান ‘বিপজ্জনক’ ও ‘চরমপন্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল’। হিন্দু পরিবারগুলোর কাছে থাকা স্বর্ণালঙ্কারে লেবার পার্টি করারোপ করতে চায় বলেও আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা চলে।

অগ্রসর নগরের মানুষ প্রতিক্রিয়াশীল প্রচারণায় কান দেয়নি। ঘনবসতিপূর্ণ শহরে সুলভ আবাসন ও আগামী চার বছর বাসভাড়া না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি তাদের কাছে অনেক বেশি অর্থপূর্ণ। এজন্যই লন্ডনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মেয়র নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। শতাংশের হিসাবেও সর্বোচ্চ উপস্থিতি ছিল। এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে সাদিক খান মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভোটারের প্রত্যক্ষ অনুমোদন পাওয়া জনপ্রতিনিধি ও নির্বাহী হলেন সাদিক খান। ব্রিটেনসহ ইউরোপ অথবা পশ্চিমা কোনো শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র তিনি। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাদিক খান ‘লন্ডনের সব মানুষের মেয়র’ হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও স্কাই নিউজ