নিজের ৫২তম জন্মদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় কামনা ছিল জনগণের সার্বিক মুক্তি। একাত্তরের সেই উত্তাল দিনগুলোর ১৭ মার্চ ছিল বঙ্গবন্ধুর এই জন্ম দিন।
এদিন জনতা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্ম দিনই কি আর মৃত্যু দিনই বা কি ? সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি জনগণের একজন। জনগণের জন্যই তার মৃত্যু এবং জীবন।
বঙ্গবন্ধু পরিষ্কারভাবে বলেন, তিনি জন্ম দিন পালন করেন না। জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালান না এবং কেকও কাটেন না। তবে একাত্তরের ১৭ মার্চ যঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্ম দিন উপলক্ষে বায়তুল মোকারম মসজিদে আছর নামাজের পর বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘায়ু কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা শেখ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বিন সায়িদ জালালাবাদী ।
পরের দিন ১৮ মার্চ দৈনিক পূর্বদেশ, ইত্তেফাক ও আজাদ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। মাহমুদ হাসানের ‘দিনপঞ্জি একাত্তর’ এবং ড. মোহাম্মদ হান্নানের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থেও একাত্তরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন সংক্রান্ত এ বিবরণ পাওয়া যায়।
‘দিনপঞ্জি একাত্তরে বলা হয়, এদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডস্থ বাসভবনে গিয়ে তাঁদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। এদিন বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিন ছাড়াও ছিল তার (বঙ্গবন্ধু) ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের ষোড়শ দিবস। সকাল ১০টায় তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে দ্বিতীয় দফা বৈঠক করেন।
কড়া সামরিক প্রহরার মধ্যে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক প্রায় এক ঘন্টা স্থায়ী হয়। এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তৃতীয় কেউ উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে এলে প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষামান দেশী বিদেশী সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরেন। তিনি এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে নিজ বাসভবনে ফিরে যান।
বাসভবনে পৌঁছানোর পর দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের আনুরোধে বঙ্গবন্ধু তাঁদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় মিলিত হন। এসময় জনৈক বিদেশী সাংবাদিক বাংলাদেশের নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে জানতে চান ৫২তম জন্ম দিনে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় কামনা কি ?
জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণের সার্বিক মুক্তি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি জন্ম দিন পালন করেন না। আমার জন্ম দিনে মোমবাতি জ্বালাই না, কেকও কাটিনা ।
বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি জনগণেরই একজন। আমার জন্ম দিনও কি, আর মৃত্যু দিনও কি। আমার জনগণের জন্যই আমার জীবন ও মৃত্যু। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যে কোন মুহুর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লেখক এবং কবি নুহ উল আলম লেনিন বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রকৃতপক্ষেই ছিলেন একজন ভূমি পুত্র। বাঙ্গালী জাতির মহান ঐতিহ্য বিশেষ করে লৌকিক ঐতিহ্যের প্রতি তার দরদ ছিল বেশী। বঙ্গবন্ধু নাগরিক সভ্যতা য় অভ্যস্ত ছিলেন না। অন্যভাবে বলা যায় নাগরিক সভ্যতার আচার আচরণ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধ’ একজন লোক নায়ক বলেই জন্মদিন নিয়ে তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন আকাঙ্খা স্বাধ প্রতিফলিত হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বলতে পেরেছেন তিনি জন্ম দিন পালন করেন না।
বঙ্গবন্ধুকে জাতির প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করে লেনিন বলেন, তিনি দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মান বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ মানুষকে কখনো দূরে সরিয়ে দেন নাই ।