সাম্প্রতিক সময়ে স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনা ধরা পড়ছে বেশি। স্বর্ণ চোরাচালানের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন শুল্ক বিভাগের গোয়েন্দা দল। গত তিন বছরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রায় ৮০ মণ স্বর্ণ জব্দ করেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
গতকাল রাজধানীতে এনবিআরের সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে চোরাচালান রোধে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন বক্তারা।
রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইডিইবি) মিলনায়তনে ‘চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি রোধে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহ্মাদ। এতে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রায়শই একটি কথা বলা হয়, অদূরভবিষ্যতে কাস্টমসের কার্যক্রম আর থাকবে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তেমনটি হবে না। কারণ কিছু মানুষ সীমান্ত দিয়ে নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ধরনের চোরাচালান রোধে কাস্টমসের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। সীমান্ত দিয়ে বেশকিছু পণ্য প্রবেশ করে, যেগুলো আমরা পছন্দ করি না। এমন তিনটি পণ্য হলো— স্বর্ণ, কোকেন ও টাকা। এছাড়া বিভিন্ন পণ্য অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে দেশে ঢোকে। এসব চোরাচালানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম অত্যন্ত শক্তিশালী হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, মুক্তবাজারের কথা চিন্তা করে আমরা শুল্ক অনেক কমিয়ে দিয়েছি। এক সময় রাজস্ব আয়ে শুল্কের অবদান সব থেকে বেশি ছিল। এখন রাজস্ব আয়ে শুল্কের অবদান সবচেয়ে কম। তবে এখন কিছু শুল্ক রাখা হয়েছে। সন্ত্রাস বা অপরাধ আটকাতেই আমাদের এ ব্যবস্থা (শুল্ক আরোপ) করতে হয়েছে।
আবদুল মাতলুব আহ্মাদ স্বর্ণ চোরাচালানের তথ্যে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, প্রতিনিয়ত র্স্বণ আটক হচ্ছে। কিন্তু কারা এর সঙ্গে জড়িত; কাদের জন্য আনা হচ্ছে— তাদের আটক করা হয় না। বরাবরই তারা ধরছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
তিনি বলেন, শুধু পাচার করা পণ্য নয়, কারা পাচার করছে এবং তাদের হোতাদের আটক করার উদ্যোগ নিতে হবে।
মূল প্রবন্ধে মইনুল খান বলেন, গত তিন বছরে প্রায় ৮০ মণ স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মূল্য এক হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। আর আটক করা হয়েছে ১৩০ জনকে। গোয়েন্দা তৎপরতায় আরো প্রায় ৫০০ মণ স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধ করা হয়েছে। আটক করা স্বর্ণ আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে।
অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতায় যাতে হাত না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আইনগুলো সংস্কার করতে হবে। ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।
এছাড়া মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন নিরাপত্তা বিশ্ল্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুুর রশীদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। বণিকবার্তা।