Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

housemaidসীমা পেটের দায়ে ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য গৃহকর্মী (খাদ্দামা) ভিসায় দুই মাস আগে সৌদিতে আসে। তার বাড়ি মাধারীপুরের শিবচরে। বাড়িতে তার ছোট একটা বাচ্চা ও মা আছে, আর্থিক স্বচ্ছলতার আশায় প্রবাস জীবনে পা রাখা। কিন্তু আলোর দেখা কি সে দেখতে পেয়েছ? নাকি উল্টো তার নিজের জীবনের প্রদীপই নিভু নিভু? আজ আপনাদের কাছে তুলে ধরা হলো একজন সৌদি প্রবাসী গৃহকর্মীর (খাদ্দামা) আর্তনাদের কাহিনী।

দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীদের নিয়ে লিখে আসছে সৌদি আরবের একটি প্রিয় ফেসবুক পেজ “আমরা সৌদি আরব প্রবাসী বাংলাদেশি”। তাদের প্রচারে প্রাধান্য পায় প্রবাসীদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক পোস্ট। তাদের পেজ ইনবক্সে কেউ একজন সাহায্য চেয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য মোবাইল নাম্বার চেয়েছে। তাদের একজন ফোন নাম্বার দেয় যার নাম মাসুক উদ্দিন। তিনি লিখেছেন,

chardike-ad

“একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে প্রশ্ন করলো, আমি বাংলাদেশি কিনা। জ্বী বাংলাদেশি বলতেই অপরপ্রান্ত থেকে এক নারী আমাকে বললেন, তিনি পাকিস্তানি। এক বাংলাদেশি নারী বিপদে পড়ে তার আশ্রয়ে আছেন। কান্নার জন্য কিছু বুঝতে পারছেন না, তাছাড়া ওই বাংলাদেশি নারী হিন্দি, উর্দু, আরবি, ইংরেজি কিছুই জানেন না। পাকিস্তানি নারী বললেন, বাংলাদেশি নারীটি তার নিয়োগকর্তার দ্বারা চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে এখন তার কাছে আশ্রয় নিয়েছে। বেচারি পাকিস্তানি আমার সাথে কথা বলবে, নিজের চাকুরী করবে নাকি নির্যাতিতা বাংলাদেশি নারীর দেখাশোনা করবে?

বাংলাদেশি নারীর মোবাইলে ব্যালেন্স নাই, তাছাড়া তিনি তার নাম্বারও জানেন না। এই মুহূর্তে তারা ২ জন কোথায় আছে তাও বলতে পারছিলেন না। নারীকে কোনোভাবে সহযোগিতা করতে পারতেছি না দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাগতেছিল। পরে ভাবলাম মোবাইলে ক্রেডিট দিয়ে বাংলাদেশি নারীর সাথে কথা বলবো কিন্তু তিনি কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছে না রক্ত বমি করছিল এবং কথাও অস্পষ্ট।

কিছুক্ষণ পরপর উনার মোবাইলে ক্রেডিট দিয়ে কথা বলতেছি। বাংলাদেশি নারী যা বলল তাতে আমি না কেঁদে পারিনি। তিনি বললেন, ২ মাস আগে গৃহকর্মী তথা খাদ্দামার ভিসায় সৌদি আরবে এসেছিলেন। কফিল বেতন দেয় না, দিনরাত কাজ করার পরও মার খেতে হয়, মারতে মারতে তার ২টা পা ভেঙ্গে ফেলল। গরম সুঁই নিয়ে কি যেন করছে বুঝতে পারিনি। এতো মার খেল যে, একমাসের মধ্যে ৩ বার হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এরই মধ্যে একদিন বাথরুমের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছিল, ভেবে ছিল ধরা দিয়ে দেশে চলে যাবেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুলিশ আবার তাকে নিয়োগকর্তার কাছে পৌঁছে দিয়েছে, এরপর নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। গতকাল তার নিয়োগকর্তা হাসপাতালে নিয়ে যাবে বলে মরুভূমিতে ফেলে চলে যায়।

অনেক কষ্টে হোয়াটসঅ্যাপ ইন্সটল করিয়ে উনাদের লোকেশন শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশি নারী এখন পাকিস্তানি নারীর হেফাজতে আছে। পাকিস্তানি নারীকে আমি বোন ডেকে বলেছি, বাংলাদেশি নারীটিকে দেখে রাখতে। পাকিস্তানি নারী বাংলাদেশি নারীর অনেক যত্ন করছে, নিজের টাকা দিয়ে মেডিসিন কিনে খাওয়াচ্ছে। আজ দূতাবাসে যাবো, দেখি নারীটির কোন সাহায্য করতে পারি কিনা।

এ বিষয়ে রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর সারওয়ার আলম জানান, আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি সীমা নামের এক নারী আল-খারিজ নামক স্থানে এক পাকিস্তানি নারীর আশ্রয়ে রয়েছেন, দাবি করছেন তিনি নির্যাতনের শিকার, যার বিস্তারিত এখনো আমরা জানি না, তবে আমরা দূতাবাসের পক্ষ থেকে লোক পাঠিয়েছি ওই নারীকে উদ্ধার করতে। আমরা ওখানকার স্থানীয় থানাকে জানিয়ে ওই নারীকে রিয়াদ দূতাবাসে নিয়ে আসবো।(বাংলাদেশ প্রতিদিন)