Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

cocacolaবিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ও নামকরা ব্র্যান্ড হচ্ছে কোকা-কোলা। শুধু তাই না, ‘কোকা-কোলা’ শব্দটি ইংরেজি ‘হ্যালো’ শব্দের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ পরচিত শব্দ। তবে এই পানীয়টি একইসাথে মানব দেহের জন্য পুরোপুরি বিষাক্ত একটি পদার্থ। একটা ব্যাটারির পানিতে যে পরিমাণ অম্লতা থাকে তার সাথে কোকের অম্লতার মাত্রা খুব কাছাকাছি। যে কারণে বাসা বাড়িতে দাগ ময়লা পরিস্কারের জন্য যে ধরনের রাসায়নিক মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়, কোকা-কোলা পানীয় ব্যবহার করেও ঠিক একই ধরনের কাজ আরও ভালোভাবে করা সম্ভব।

মজার বিষয় হচ্ছে, ৩য় বিশ্বের অনেক দেশে যত সহজে না পরিষ্কার পানির সন্ধান মেলে তার চেয়ে সহজে এবং সুলভ মূল্যে পাওয়া যায় কোক। বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য গণপ্রচারণা ব্যবহার করে কোক তার খদ্দেরদের ও গোটা একটা জাতিকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলেছে যে তারা আসলে পরিবেশ বান্ধব একটা কোম্পানি। কিন্তু বাস্তবে কোকা-কোলা আসলে দূষণ, পানিসল্পতা এবং অনেক জটিল রোগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট।

chardike-ad

যে সমস্ত মানুষ কোকের মত কোমল পানীয় প্রতিদিন পান করে তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক করার সম্ভবনা যারা কোমল পানীয় পান করেনা তাদের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কোকে উপস্থিত রয়েছে ফসফোরিক এসিড। এটা কিন্তু কার্বোনেশান (পানিতে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস মেশানো) মিশ্রণ নয়। এই ফসফোরিক এসিড হচ্ছে ময়লা পরিস্কার করার রাসায়নিক পদার্থ। কেউ যদি নিয়মিত এই পদার্থ পান করে তাহলে তার হৃদপিণ্ড, যকৃত, কিডনি এবং হাড় ক্ষয় ঘটবে। কাজেই খুব স্বভাবতই প্রশ্ন জাগা উচিত যে, কোকা-কোলা পান করার ফলে শরীরের ভিতরে আসলে কি ঘটে?

এক গ্লাস কোকে যে পরিমাণ শর্করা থাকে সেটা পান করার ১০ মিনিটের মাথায় শরীরে ক্ষতিকর বিক্রিয়া শুরু হয়। সমস্যা ঘটে যখন ফসফোরিক এসিড শরীরের চিনির কার্যক্রমকে বাধা দিতে শুরু করে। ২০ মিনিটের মাথায় রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা লাফ দিয়ে বেড়ে যায়। ৪০ মিনিটের মাথায় শরীর সমস্ত ক্যাফেইন শোষণ করে ফেলে। চোখের মনি আকারে বৃদ্ধি পায়, রক্ত চাপ বৃদ্ধি পায়। কারণ যকৃত তখন বেশি মাত্রায় শর্করা ছড়িয়ে দিচ্ছে রক্ত স্রোতে। এ পর্যায়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কাটানোর জন্য শক্তির রুপান্তর ঘটক এডেনোসিন সংবেদক (পি-১ রিসেপটরস) রুদ্ধ হয়ে যায়। ৪৫ মিনিটের মাথায় ডোপামিন হরমোন উৎপাদন বেড়ে যায়। ডোপামিন মস্তিস্কের সুখানুভতিকে তরান্বিত করে। অনেকটা শক্তিশালী মাদক দ্রব্য হেরোইন যেটা করে। ১ ঘণ্টার সময় ফসফোরিক এসিড ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংককে পরিপাক তন্ত্রে জমাট বেঁধে ফেলে যার শরীরের আভ্যন্তরীণ রাসায়নিক পদার্থগুলো অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চয় করে। সেই সাথে প্রস্রাবের সাথে ক্যালসিয়ামের নির্গমন শুরু হয়। শেষ ধাপে শুরু হয় প্রস্রাবের বেগ বৃদ্ধি প্রক্রিয়া। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক শরীর থেকে বেরিয়ে যায় প্রস্রাবের সাথে । এগুলো আমাদের হাড়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পর্যায়ে এসে আমাদের নির্জীব কিংবা খিটখিটে অনুভূতি হয়।

cocacola-effectআমরা যখন ঠাণ্ডা এক বোতল কোক খুব সতেজতার সাথে পান করি তখন কি আমরা একবারও ভাবি ঠিক কি ধরনের রাসায়নিক পদার্থ আমরা শরীরে প্রবেশ করাচ্ছি? কোকা-কোলা তৈরিতে মূল কার্যকরী উপাদান হচ্ছে অর্থোফসফোরিক এসিড। এটা মারাত্মক ক্ষয়কারক পদার্থ। তার সাথে যোগ করা হয় ক্যাফেইন, সুগার এবং আরও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ। এমনকি কোকা-কোলা কোম্পানির বহুল বিজ্ঞাপিত ক্যাফেইন বহির্ভূত ‘কোকা-কোলা লাইট’ পরীক্ষা করে যে রাসায়নিক পদার্থগুলো পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে- কার্বন ডাই অক্সাইড মিশ্রিত পানি, অ্যামোনিয়াম সালফেট, সোডিয়াম সাইক্লেমেট, অ্যাসেসসালফেম পটাশিয়াম, অ্যাসপারটেম, অর্থোফসফোরিক এসিড, সাইট্রিক এসিড ও সোডিয়াম বেনজেট ইত্যাদি। এইসমস্ত রাসায়নিক উপাদানগুলোর প্রত্যেকটি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। কোনটার ক্ষতি খুব দ্রুত বোঝা যায়, আবার কোনটা ক্ষতি করে ধীরে ধীরে।

পান করা বাদে কোকের বাস্তব ব্যবহারগুলো দেখে এই ক্ষয়সাধনের মাত্রা সম্বন্ধে একটা প্রত্যক্ষ ধারণা পাওয়া যায়। কোক কাজ করে এসিডিক ক্লিনার হিসেবে। যেমন, এক বোতল কোকে যে পরিমাণ এসিড থাকে তা দিয়ে দাঁতের এনামেল তুলে ফেলা যাবে। কারণ একটা ব্যাটারি এসিডের পিএইচ মাত্রা যেখানে ১, সেখানে কোকের পিএইচ মাত্রা ২.৫। অথচ বিশুদ্ধ পানির পি এইচ মাত্রা হচ্ছে ৭।

নিচের এই ভিডিও থেকে কোকা-কোলার ক্ষয় ক্ষমতা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যাবে-