ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সহ-সভাপতি গ্রুপের মধ্যে আবারো গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুর ১টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলা কালে ৮ রাউন্ড গুলি এবং ককটেল বিস্ফোরন হয়েছে। এতে আব্দুর রহিম, মনির খান, এনায়েত করিম তপুসহ উভয় গ্রুপের কম পক্ষ্যে ১২জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতরা ইবি মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। তবে কেউ মারাত্বকভাবে আহত হয়নি বলে জানা যায়।
এদিকে সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মতায়েন করে নিরাপত্তা জোড়দার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংঘর্ষের পর তাৎক্ষণাত এক জরুরী সিন্ডিকেটে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় প্রশাসন। শিতের ছুটি শেষে ৫ জানুয়ারী সকল ৯ টায় আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে। ৬ জানুয়ারী থেকে যথারীতি ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের জের ধরে শনিবার সকাল থেকেই ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সহসভাপতি গ্রুপের নেতা কর্মীরা ক্যাম্পাসে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এতে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। উভয় গ্রুপের সিহংভাগ কর্মী স্থানীয় বহিরাগত সন্ত্রাসী বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা। বিপুল পরিমান র্যাব-পুলিশের সামনেই বহিরাগত সন্ত্রাসীরা বিদেশী পিস্তলসহ বিপুল পরিমানে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলারুদ এবং রামদা, চাপাতি, চাকুসহ দেশীও অস্ত্রপাতি নিয়ে ক্যাম্পাসে রণ ক্ষেত্রে তৈরী করে। কিন্তু আগ্নেয় অস্ত্র বহণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন কে কনো ব্যাবস্থাই নিতে দেখা যায় নি।
সকাল থেকেই উভয় গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। এতে ক্রমেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। দুপুর ১২টার বাস ক্যাম্পাস ত্যাগ করার পর উভয় পক্ষের নেতা কর্মীদের মাঝে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পরলে অবস্থার অবনতি ঘটে। এক পর্যায়ে সহসভাপতি গ্রুপের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। এতে উভয় গ্রুপের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার এক পর্যায়ে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে সভাপতি গ্রুপের নেতা-কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্রধারী বহিরাগত সন্ত্রাসী সহ পিছুটান দিয়ে বঙ্গবন্ধু হল এলাকায় অবস্থান নেয়। এই সুযোগে সহসভাপতি গ্রুপের কর্মীরা বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে ছাত্রলীগের টেন্ট দখলে নেয়। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর সহসভাপতি গ্রুপের কর্মীরা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে ক্যামাসে মানববন্ধন করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানায়, এসবই ঘটেছে র্যাব-পুলিশের উপস্থিতিতে। পুলিশের উপস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা,চাপাতি নিয়ে সন্ত্রাসীরা অবস্থান করলেও পুলিশ তাদের কিছুই বলেনি। এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে অস্ত্র বহণকারী সন্ত্রাসীদের বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে নানা মুখি তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে। তারা বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের অস্ত্রনিয়ে সংঘর্ষ ক্যাম্পাসের ১৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারিদের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরণের হুমকি। এতে প্রশাসনের প্রতি আমাদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছি। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ্যপাতের অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এব্যপারে ইবি ছাত্রলীগের সভাপতি জানান, “আমারা সকাল থেকে টেন্টে শান্তিপূর্ন ভাবে অবস্থান করছিলাম। এক পর্যায়ে কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী ও পুলিশ আমাদের উপর অতর্কিত গুলি ছোড়ে। আমাদের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে আমরা প্রতিবাদ করেছি।”
সহসভাপতি গ্রুপের কর্মী সোহেল রানা হালিম বলেন, “আমারা মিছিল বের করলে তারা আমাদের উপর গুলি ছোড়ে। এতে আমাদের কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে তাদের ধাওয়া দেয়।”
প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি প্রফেসর ড. ইকবাল হোসাইন বালেন, “ প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মতে আমরা শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। ৫ জানুয়ারী সকল ৯ টায় আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।
প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান বলেন, “পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। আশা করছি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।”
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম জানায়, “আমারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ২ রাউন্ড ফাকা গুলি করেছি। বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভবিক রয়েছে।”