Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

peculiar-marriageশীত এলেই বিয়ের জন্য নড়েচড়ে বসে সবাই। অর্থাৎ আমাদের এখানে শীত যে বিয়ের মৌসুম, এটা একপ্রকার প্রতিষ্ঠিত হয়েই গেছে। মা, বাবা ও ঘটকরা এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন খুব। কিন্তু আমরা কি জানি, কীভাবে বিয়ে প্রথা শুরু হয়েছিল ? কিংবা কী এর শুরুর ইতিহাস? আরো আছে সারা বিশ্বে বিচিত্র সব বিয়ের আয়োজন। চলুন, সেইসব বিয়ের খবরগুলো জানি।

বিয়ে প্রথার শুরুর খবর: সমাজ বিশেষজ্ঞরা বিয়েটাকে মোটামুটি তিনটি পর্বে ভাগ করেছেন। শুরুর পর্বটা মোটেই সুখকর ছিল না। জোরপূর্বক বিয়েই তখনকার দিনের প্রধান আকর্ষণ ছিল। কোনো গোত্রের মেয়েকে পছন্দ হলে, বাহুবলে তাকে উঠিয়ে এনে রাখা হতো নিজের কাছে। এ নিয়ে খুনোখুনি হতো অবশ্য। কিন্তু সবশেষে আত্মীয়তার মাধ্যমে মীমাংসা হতো বিষয়টার। মেয়ে অপহরণ করে বিয়ে করার উদাহরণ আমরা দেখতে পাই, ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ, মহাভারতে। গ্রিক সাহিত্যেও ভুরিভুরি নজির আছে। তবে প্রাচীন কালে যারা বাহুবলে পারত না, তাদের মধ্য থেকে অনেকে মেয়েকে গোপনে উঠিয়ে এনে নির্জন পাহাড়ে লুকিয়ে রাখত। তারপর পরিস্থিতি শান্ত হলে, গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে আসত। আজকের দিনে দূরে, নির্জনে হানিমুন করাও কিন্তু প্রাচীন পদ্ধতির আধুনিকায়ন। আদি কালে বীর ও শক্তিশালী যোদ্ধারা সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বাজনা বাজিয়ে কনেকে জোর করে উঠিয়ে আনতে যেত। যুদ্ধে জিতেই তবে মেয়েকে ঘরে আনত। আজও কিন্তু বর- কনের বাড়িতে গেলে কনে পক্ষ গেট আটকে দাঁড়ায়। তবে এ যুদ্ধ মধুর। কিছু বকশিস নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

chardike-ad

দ্বিতীয় পর্বটা একটু অপমানকর। এ পর্বে বিয়ের কনেকে হাটেবাজারে তোলা হতো, ঠিক গরু-ছাগলের মতো। আজকের দিনেও আফ্রিকার কোনো কোনো স্থানে এ প্রথা রয়ে গেছে। আধুনিকভাবে এটাকে বলা হয়, বউবাজার। কনের বাবাকে নগদ অর্থ, গবাদি পশু ও শস্যাদি দিয়ে বউ কিনে আনা হতো। বিয়ের যে ইংরেজি শব্দ সেখানেও এই দেনাপাওনার ব্যাপার আছে। যেমন, ওয়েডিং (wedding) শব্দটি এসেছে অ্যাংলো স্যাকসন শব্দ ওয়েড (wedd) থেকে। এর অর্থই হলো, টাকা-পয়সা, গবাদি পশু যা বিয়ের রাতে কনেকে উপহার দিত তার জীবনের আর্থিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে। ইংল্যান্ডে এই প্রথার চল বহুদিন পর্যন্ত ছিল। তবে আজকের দিনে পদ্ধতি পরিবর্তন হয়েছে। এখন কনের বাবাকে বরং উল্টো কনের সঙ্গে টাকাও দিতে হয়। এটার আধুনিকায়ন হলো যৌতুক প্রথা।

বিয়ের তৃতীয় পর্বটা এখনও পর্যন্ত তেমন জাঁকিয়ে বসতে পারেনি। তবে দিন দিন এই প্রথার প্রচলন বাড়ছে। সমাজ বিশেষজ্ঞরা তৃতীয় পর্ব বলতে বোঝাচ্ছেন, বর বা কনের পরিবারের কোনো মতামত থাকবে না। এখানেই বর আর কনেই প্রধান। তারা নিজেরা পরস্পরকে পছন্দ করবে এবং মা-বাবাদেরও সেটা মেনে নিতে হবে।

বউ ৭৬ আর স্বামী ১ !: মাজাক মালক আকট দক্ষিণ সুদানের অধিবাসী। তিনি দিনকা উপজাতির প্রধান। ৬৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বিয়ে করেন ৭৬টি। তার পরিবারকে সবাই তামাশা করে বলতো, পারমাণবিক পরিবার। ৬৫ জন ছেলে সন্তান ও ৮৬ জন মেয়ে সন্তানের বাবা তিনি। বউদের মধ্যে ৪০ জন সন্তান প্রসব করেছেন। আফ্রিকায় বহু স্ত্রী রাখার ঘটনা তেমন আশ্চর্যজনক নয়। তবে আকটের ক্ষেত্রে বিয়ের সংখ্যাটা একটু বেশিই। তার সম্পদের পরিমাণও ছিল প্রচুর। সুতরাং ভরনপোষণের ব্যাপারে তিনি ছিলেন নিশ্চিন্ত।

৩১টি যুগলের বিয়ে এক সঙ্গে: ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে কুয়েতের একটি ফাইভ স্টার হোটেলে এই গণবিয়ের আয়োজন করা হয়। মুসলিম রীতিতে ৬০০ জন পুরুষ আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবের উপস্থিতিতে ৩১টি যুগলের বিয়ে হয়। গণবিয়েটির আয়োজনে ছিল ‘ওসমান জাকাত’ কমিটি নামক একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। অন্য হোটেলে বাসর রাত যাপনের খরচও এই প্রতিষ্ঠানটি বহন করে। জানা যায়, কুয়েতে বিয়ের খরচ ও যৌতুকের চাহিদা বেশি হওয়ায় গরিব তরুণ-তরুণীরা অবিবাহিত থাকতে অনেকটাই বাধ্য হন। এটা থেকে সামান্য পরিত্রাণ দিতে ওসমান জাকাত কমিটির এই অভিনব প্রচেষ্টা।

সেট বিয়ের রাজা: রাজাদের বেশি বিয়ে করা আফ্রিকা মহাদেশে একটা সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে ৪১৫ জন স্ত্রী! এটা ভাবতেই নড়েচড়ে বসাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ব্যাপারটি নিছক মজা করে উড়িয়ে দেবারও কোনো সুযোগ নেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৮৭৩ থেকে ১৮৯৪ পর্যন্ত মোট ২১ বছর আফ্রিকার কঙ্গো রাজ্য শাসন করে ওনিস্ক রাজা। কথিত আছে ওই রাজাই এতগুলো স্ত্রীর স্বামী ছিলেন। মজাটা অন্যখানে, তিনি এক সঙ্গে অনেকগুলো বোনকে পছন্দ করতেন। পরিসংখ্যান বলে, তার স্ত্রীদের মধ্যে এক সেটে ছিলেন ৫৫ বোন, আর অন্য সেটে ৩৫। এসব বোন নাকি আবার একই বাবার সন্তান। এভাবে ছোট-বড় আরো কয়েক সেট বিয়ে করেন তিনি। সে হিসেবে দেখা যায়, তিনি প্রায় শতবার নিজেই নিজের ভায়রা ভাই হয়েছেন।

নিম গাছ বর, আর বউ পিপুল গাছ: ২০০৪ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি ইউএনআই বার্তা সংস্থার একটি সংবাদে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য ভারতের প-িচেরিতে জমকালো অনুষ্ঠান করে দুটি গাছের মধ্যে বিয়ে দেওয়া হয়। ভারতের তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিজেপির এক স্থানীয় সংসদ সদস্যও অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। শত শত গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে হিন্দু রীতি অনুযায়ী বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিদের ভোজনপর্বটাও দেখার মতো ছিল। বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য প্রাণীদের মধ্যে বিয়ের রীতি হিন্দু ধর্মের প্রাচীন প্রথা। তাই বলে দুটি গাছের মধ্যে বিয়ে! সত্যিই এটা ব্যতিক্রমই বটে।

হ্যাঁ, আমি একই সঙ্গে ৬২ স্বামীর স্ত্রী: ইংল্যান্ডের শেফিল্ডের পুলিশ কোর্টের আসামির কাঠগড়ায় গড়গড় করে শিরোনামের কথাটা বলেছিলেন ২৪ বছরের এক সুন্দরী তরুণী। ঘটনাটি ঘটে ১৯৯২ সালে। আগের স্বামীর অনুমতি না নিয়েই একের পর এক ৬২ জনকে বিয়ে করেন তিনি। স্থানও ভিন্ন ভিন্ন। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, জার্মানি ও দক্ষিণ আফ্রিকার আলাদা আলাদা জায়গায় বসবাস করত তার স্বামীরা। থেরেসা ভন নামের এই তরুণী সবগুলো বিয়ে করেছেন মাত্র ৫ বছরে। মজার ব্যাপার হলো, তার এই এতগুলো বিয়ের বিষয়ে স্বামীরা কেউ জানত না।

ঝুলন্ত কাপড়ের উপর শুয়ে বিয়ে: কাছাকাছি দুটি গাছে কাপড় বেঁধে শক্ত করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। তার উপর শুয়ে পড়ে বর। বিয়ের পোশাকে সাজুগুজু করে এসে বরের পাশে বসে কনে। এভাবে পাশাপাশি মিনিটখানেক বসে থাকলেই তাদের বিয়ে হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এভাবে বিয়ে হয় পানামা দেশের বিলাস উপজাতীয়দের মধ্যে।

বিয়ের বয়স নির্ধারণে অভিনব পদ্ধতি: কোনো হাড় না ভেঙে আস্ত মুরগির বাচ্চা চিবিয়ে খেতে হবে। সঠিকভাবে খেতে পারলে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে ধরে নেওয়া হয়। এ রীতি বিদ্যমান আফ্রিকার কঙ্গো রাজ্যের বান্ডা মেয়েদের ক্ষেত্রে। পরের এক বছর ওই মেয়েকে আর কোনো কাজ করতে দেওয়া হয় না। এমনকি তার নিজের কাজও। এই সময়টাতে অন্যরা তার গোসল করিয়ে দেয়, খাইয়ে দেয়, বিছানায় শুইয়ে দেয়। বিয়ের আগ পর্যন্ত এ নিয়ম বলবৎ থাকে।

নিয়মভাঙা এক বিয়ের খবর: ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দ। রাশিয়ার রানি জারিনা আদেশ জারি করল, কোনো লোক বিদেশিকে বিয়ে করতে পারবে না। কিন্তু স্পর্ধা দেখাল গ্যালিটজিন। সে তার ইতালিয়ান প্রেমিকাকে বিয়ে করে বসল। এ খবর রানির কাছে পৌঁছালে, শাস্তি হিসেবে তাকে প্রচণ্ড শীতল স্থান নেভা নদীর তীরে এক কুৎসিত বৃদ্ধা নারীর সঙ্গে বাসর ও জীবন কাটাতে আদেশ দেওয়া হয়। সৈন্যরা নিয়মিত তাদের খাবার দিয়ে আসত। তাদের ধারনা ছিল, তারা বোধহয় বাঁচবে না। ঘটনার এক বছরের মাথায় যমজ সন্তান হয় তাদের। সম্রাজ্ঞী মারা যায় এই সময়ে। সুযোগ বুঝে গ্যালিটজিন পালিয়ে যায় ইতালিয়ান প্রেমিকার কাছে। আর জীবনের বাকি বছরগুলো এই প্রেমিকার কাছেই কাটায় সে।