২৪ দিনের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। ড্রেসিংরুম, মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে ঘটেছে নানা ঘটনা। চার-ছক্কায় ব্যাটসম্যানদের আধিপত্যের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বোলাররাও দেখিয়েছেন কারিশমা। স্পিন, পেস, কাটার অ্যাটাকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেছে নানা কৌশলে। ২২ গজে রানের যেমন প্রতিযোগিতা ছিল, তেমনি বোলারদের ছিল উইকেট শিকারের প্রতিযোগিতা। নৈপুণ্যে এগিয়ে যেতে মরিয়া ছিল প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজি দল।
পিছিয়ে পড়া দলগুলো শেষটায় চমক দেখিয়েছে। আর শীর্ষ সারির দলগুলোর চোখ শিরোপায় থাকলেও যাদের নিয়ে আলোচনা কম হয়েছে সেই মাশরাফির কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বরিশাল বুলসকে হারিয়ে জিতল বিপিএল তৃতীয় আসরের শিরোপা। নয়া দিগন্তের পাঠকদের জন্য বিপিএলের আলোচিত সাফল্য, ব্যর্থতা, আলোচনা-সমালোচনার কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো।
সিলেট সুপার স্টারসের টানা ১ রানের দুই হার : শুরুটা খারাপ হওয়ায় হতাশায় কান্ত ছিল সিলেট। ক্রমাগত হারে প্রথম ২০ ম্যাচ পর্যন্ত সবার নিচেই ছিল মুশফিকুরের সিলেট সুপার স্টারস। শুরুর দু’টি ম্যাচের রেজাল্টই নাকি প্রভাব ফেলেছে পরের ম্যাচগুলোতেও। টানা দুই ম্যাচে ১ রানে হার। ২৩ নভেম্বর নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে ১৮০ রানের জবাবে সিলেট ৬ উইকেটে ১৭৯ রানেই থামে তাদের ইনিংস। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই চিত্র। এক দিন পরই বরিশাল বুলসের ১০৮ রান টপকাতে পারেনি মুশফিকরা। ৯ উইকেটে তাদের সংগ্রহ ১০৭।
নবম ম্যাচে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে সিলেট। ৯ নভেম্বর ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে এক বল বাকি থাকতে জয় পেয়েছে তারা। ঢাকার ১৫৭ রানের জবাবে এক বল বাকি থাকতেই জয়ী হয় সিলেট।
তামিম ও অনাকাক্সিক্ষত মুহূর্ত : খেলোয়াড় বনাম ফ্রাঞ্চাইজি কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। ২৩ নভেম্বর সিলেট বনাম চিটাগাংয়ের ম্যাচে যা জন্ম দিয়েছে নানা কথার। যেখানে খেলা ছাড়ার হুমকিও দিলেন চিটাগাং ভাইকিংসের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বিদেশী দুই খেলোয়াড় রবি বোপারা ও জশুয়া কবের সিলেটের পক্ষে খেলা নিয়ে সমস্যা শুরু। নিজ দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অনাপত্তিপত্র ছিল না তাদের। টস হলেও খেলা শুরু হয় দেরিতে। এরই মধ্যে সিলেট কর্মকর্তাদের সাথে এক চোট বাগি¦তণ্ডা হয় তামিমের। পরে তামিম মিডিয়ার সামনে বলেন, ‘তারা আমার সাথে ভিুকের মতো আচরণ করেছে। এমন চলতে থাকলে খেলাই ছেড়ে দেবো।’
উমর আকমল ২৪ ঘণ্টায় তিনবার আউট : ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক ব্যাটসম্যান তিনবার আউট হতে পারেন। আশ্চর্য হলেও সত্যি, এমনটিই করে দেখালেন চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে খেলা পাকিস্তানের উমর আকমল। তবে সব আউট বিপিএলে নয়, আছে আন্তর্জাতিক ম্যাচও।
৩০ ডিসেম্বর রাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-২০ ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। ওই ম্যাচে ৪ রান করে আউট হন উমর। ম্যাচটিতে দুই দলের ১৫৪ স্কোর সমান হলে ম্যাচটি গড়ায় সুপার ওভারে। ওই ওভারে ক্রিজে যান শহীদ আফ্রিদি ও উমর আকমল। ইংলিশ পেসার ক্রিস জর্ডানের শেষ বলে আউট হন উমর। ১২ ঘণ্টা পরই চট্টগ্রামে বিপিএলের ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে মাঠে নামেন উমর। আট বল খেলে ১ রান করে আউট হন সাকিব আল হাসানের বলে। ২৪ ঘণ্টায় তিনবার আউটের ঘটনা মনে হয় বিশ্বে কারো নেই।
নিষিদ্ধ সাকিব : চলতি বিপিএলে প্রথম নিষেধাজ্ঞায় পড়ে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা হয় দেশসেরা সাকিব আল হাসানের। ২৬ নভেম্বর সিলেট সুপার স্টারসের মুখোমুখি হয় সাকিবের রংপুর রাইডার্স। ম্যাচে জয়ী হয় রংপুর। সাকিবও হন ম্যাচসেরা। এর পরই শুনতে হয় দুঃসংবাদটি। ম্যাচ চলাকালে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ (প্রতিবাদের ধরন উগ্র হওয়ায়) করলে ওই শাস্তি হয় সাকিবের।
আল আমিনের হ্যাটট্রিক : ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলে ছিলেন আল আমিন। তবে মাঠে নামার আগেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরতে হয় তাকে। এর পর থেকেই মাঠের বাইরে। সুযোগ পেলেন বিপিএলে। ফিরেই চলতি আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন। ২৪ নভেম্বর বিপিএলের তৃতীয় দিনে বরিশালের হয়ে সিলেটের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ পাঁচ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচসেরা। তবে এ ম্যাচে অশোভন আচরণ করায় জরিমানাও গুনতে হয় তাকে। কারণ ব্যাট হাতে মোহাম্মদ শহীদের বলে বোল্ড হওয়ার পর অপেশাদার আচরণ করেন আল আমিন। শহীদও জড়ান বিবাদে। জরিমানা করা হয় দু’জনকেই।
এভিন লুইসের ঝড়ো সেঞ্চুরি : বিপিএলে এবার চার, ছক্কা, উইকেট, হ্যাটট্রিক দেখলেও কমতি ছিল সেঞ্চুরির। ৭০ রানের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ। শেষ পর্যন্ত চলতি বিপিএলে তা করে দেখান বরিশাল বুলসের ক্যারিবীয় তরুণ ব্যাটসম্যান এভিন লুইস। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে রীতিমতো তাণ্ডবই চালান তিনি। মোস্তাফিজ, নাসির, ডেসকাট কাউকে রেহাই দেননি। ৬৪ বলে লুইস পূর্ণ করেন শতক। শেষ পর্যন্ত ৬৫ বলে ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন। দর্শকদের চাহিদা ছিল গেইলের দিকেও। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করায় ৯২ রানেই অপরাজিত থাকতে হয় তাকে।