পৃথিবীতে এমন কিছু শহর রয়েছে যেখানে দিনের আলো পৌঁছায় না। সেখানে সবসময়েই রাত। সুমেরু বৃত্তে বসবাস করা মানুষদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে বিবিসি। চলুন তাদের বয়ানে শুনি আলোহীন জীবনের অভিজ্ঞতা।
ঘড়ির কাঁটায় বাধা আমাদের জীবনে আলো-আঁধারের গুরুত্বও কম নয়। দিনের শুরুর আলো আর শেষের আলোর মধ্যে মেজাজ এবং ধরনের অনেক তফাৎ। কিন্তু যেখানে এসব আলোর খেলা নেই সেখানকার ব্যাপারটা কেমন?
ধরুন ডিমভাজি দিয়ে সকালের নাস্তা করছেন। কিন্তু জানালা থেকে হালকা রোদটা আসছে না, আসছে চাঁদের আলো! আমাদের হয়তো পেটে তখন নাস্তা যাবে না, কিন্তু পৃথিবীর অনেক প্রান্তের মানুষই এভাবে তাদের জীবনকে সাজিয়ে নিয়েছেন ভিন্ন আলোয়।
বিশেষ করে সুমেরু বৃত্তে বসবাসকারী মানুষদের এই অভিজ্ঞতা বেশি। গরমের দিনে তাদের সূর্যাস্ত হয় না আবার দেখা গেল শীতের দিনে সূর্যোদয় নেই। টানা তিন মাস একই অবস্থা। কোয়েরাডটকম নামের একটি সাইটে এই অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন জন তাঁদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন।
ভারতের দিল্লির বাসিন্দা সাই দিপক ভিমারাজু জানিয়েছেন, তিনি ইন্টার্নশিপের জন্য দুই মাস নরওয়ের ট্রন্ডিহেইমে ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘সেখানকার বাসিন্দারা সবাই এই সময়ে বিরক্ত থাকে। কারণ এটা তাদের শরীরের সাথে যায় না। কিন্তু আমার তেমন সমস্যা হয়নি। যদিও আমি মাত্র দুই মাস সেখানে ছিলাম। আমি সকালের নাস্তা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম। বাইরে তখন কড়া রোদ। কিন্তু আলোতে ঘুমাতে আমার সমস্যা হয় না।’
সে সময়ে দিপকের দিনের কার্যসূচি ছিল সকালে নাস্তা করে ঘুমিয়ে পড়া। দুপুরের দিকে উঠে ২টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কাজ করা। ১০টা কিন্তু রাত নয়, কারণ তখনও মাথার উপর গনগনে সূর্য। ডিনার করে যখন সিনেমা দেখতে বসতেন তখনো সূর্যের তেজ একটুও কমেনি।
এই অভিজ্ঞতাকে দিপক বলেছেন ‘মরুভূমি বাস’! তবে এর একটা সুবিধার কথাও বলেছেন তিনি, সারাক্ষণ দিনের আলো পাওয়ায় অনেক বেশি চাঙ্গা থাকতেন দিপক। সারাক্ষণ আলোর মধ্যে থাকাটাকে ‘স্বর্গীয় অনুভূতি’ মনে হয়েছে তাঁর কাছে।
নরওয়ের ফিনমার্কের বাসিন্দা উইলফ্রেড হিল্ডোনেন জানিয়েছেন, আলো না নেভা দিনগুলোতে মানুষ অনেক বেশি সামাজিক হয়ে ওঠে। দেখা যায় ডিনারের পর সবাই ঘুরতে বের হচ্ছে। বাচ্চারা ডিনার খেয়েই মাঠে খেলতে নেমে যাচ্ছে। কারো কোনো বারণ নেই। ২৪ ঘণ্টার হিসাবে তখন রাত ৩টা বাজে!
সুমেরু বৃত্তে থাকা নরওয়ের একটি ছোট্ট গ্রাম ব্লেইক। সেখানকার বাসিন্দা ফ্রোডে স্যান্ড জানিয়েছেন, শুধু আলো বা আঁধার না। খারাপ আবহাওয়া, প্রচুর বরফ, ঠাণ্ডা আবহাওয়া সবকিছু মিলিয়ে এ ধরনের পরিবেশে খাপ খাইয়ে চলাটা খুবই মুশকিল। ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা এই আবহাওয়ায় বাস করে ভিটামিন ডি এর অভাবে ভোগেন। যারা মানিয়ে নিতে পারেন বিরূপ আবহাওয়ার সাথে তারা থেকে যান আর যারা সেটা সহ্য করতে পারেন না তারা অপেক্ষাকৃত দক্ষিণের দিকে নতুন আবাস খুঁজে চলে যান।