আবদুল্লাহ আল বাকী:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দান করা মাসগুলোর মধ্যে কিছু মাস বিশেষভাবে মর্যাদাপ্রাপ্ত। তার মধ্যে রমজান সবার ওপরে। এ সময় তার পরে জিলহজ্ব। তারপর রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসাবে শাবান মাসকে রসূল (স.) বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। তাঁর ইবাদত বন্দেগীতে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে।
রসূল (স.) বলেছেন, রমজান হলো আল্লাহর মাস আর শাবান হলো আমার মাস। যার দৃষ্টান্ত স্বরূপ তিনি প্রচুর ইবাদত করতেন। প্রত্যেক আরবি মাসের (রমজান ছাড়া) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ানে বীজের রোজা রাখতেন প্রিয় নবী (স) কিন্তু যখন শাবান মাস আসতো রসূল (স.) প্রায় পুরো শাবান মাস সংযমব্রত পালন করতেন। আর নফল ইবাদত বন্দেগী করতেন সবই অধিক পরিমাণ। তাছাড়া একটি দোয়া বারবার তার মুখে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতো। তাহলো “আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রমজানা অর্থাত্ হে আল্লাহ, রজব ও শাবানে আমাকে বরকত দিন এবং আমাকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।
হযরত আয়শা (রা.) বলেন, যখন শাবান মাস আসতো তখন রসূল (স.) অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক গুরুত্ব দিতেন ও রোজা রাখতেন। মাঝেমধ্যে একাধারে রোজা পালন করে শাবানের শেষ দিনটি বিরতি দিয়ে আবার রমজানের রোজা পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করতেন। সেই কারণে যারা রসূল (স.) এর সত্যিকারের উম্মত হতে চায় তাদের প্রত্যেকের উচিত হলো রসূলের (স.) এই সুন্নতের সম্পূর্ণরূপে পরিপালন করা। কেননা রসূল (স.) বলেছেন, মান তামাসসাকা সুন্নাতি ইন্দা ফাসাদান উম্মাতি ফালাহু আজরুহু মিয়াতাশ শাহিদ অর্থাত্ যদি কেউ আমার কোনো হারিয়ে যাওয়া সুন্নতকে উজ্জীবিত করে তাহলে তাকে একশত শহীদের দরজা দান করা হবে। অন্যস্থানে বলেছেন, মান তরাকা সুন্নতি ফালাইছা মিন্না অর্থাত্ যে ব্যক্তি (ইচ্ছাকৃতভাবে) আমার কোনো সুন্নতকে পরিহার করবে সে আমার উম্মত নয়, আর রসূলের উম্মত না হলে বেহেশত পাওয়া আদৌ সম্ভব নয়। কারণ রসূল (স.) বলেছেন, কুল্লু উম্মাতুই ইয়াদ খুলুনাল জান্নাহ ইল্লা মান আবা কিলা মান আবা ইয়া রসূলুল্লাহ (স.)? মান আতাআনি ফাদাখালাল জান্নাহ, অমান আসানি ফাক্বদ আবা অর্থাত্ আমার প্রত্যেক উম্মত বেহেশতে যাবে কেবল মাত্র অসম্মত ছাড়া।
সাহাবীরা বললেন, কে অসম্মত হে রসূল (স.)? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা বেহেশতে যাবে। আর যারা আমার সুন্নতের অবজ্ঞা করবে তারাই অসম্মত। সেই কারণে যারা রসূল (স.) এর উম্মত হয়ে জান্নাত হাসিল করতে চায়, তাদের প্রত্যেকের উচিত হলো রসূলের প্রতিটি সুন্নতের অনুসরণে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করা। আর সেই লক্ষ্যে এই শাবান মাসেই নিজেকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামায়াতে আদায় করা, সুন্নত নামাজ, নফল নামাজ ও ইবাদত বন্দেগী করা অতীব প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন, আমীন।
(২ জুলাই ২০১৩, ঢাকা টাইমস টোয়েন্টি ফোর.কম)