এলান খান চৌধুরি, ১৬ জুন, সিউলঃ
ইমাম লি। দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসরত একজন সফল ব্যবসায়ী। ১০০ ডলার নিয়ে ২৪ বছর এসেছিলেন কোরিয়াতে নিজের ভাগ্য গড়তে। এখন কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের একজন। ব্যবসায়ী ছাড়াও তার বেশ কয়েকটি পরিচয় আছে। তিনি একাধারে অভিনেতা, লেখক, গীতিকার, মডেল। প্রবাসে এসে ব্যবসায় ব্যস্ত সময় কাটালেও বন্ধ করেননি তার শিল্প-চর্চা।
বাংলা টেলিগ্রাফের পক্ষ থেকে কথা বলতে ফোন দিয়েছিলাম ইমাম লিকে। সানন্দে রাজি হলে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় দেখা করলে ভাল হয়। কফিশপই আড্ডার জন্য জমজমাট জায়গা জানালেন তিনি। যথাযথ সময়ে আড্ডা শুরু হলো, জানা হলো ইমাম লি’র জীবনের নানা দিক, কোরিয়ার প্রবাস জীবনের কথা, একজন শিল্পী হিসেবে তার ভাবনার কথা। তার সাথে আড্ডার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোই পাঠকের সামনে তুলে ধরছি।
অভিনেতা ইমাম লি
এশিয়ার ‘কান’ বলে খ্যাত বুসান ফিল্ম ফেস্টভালে ২০১২তে ইমাম লি একমাত্র অভিনেতা যার দুটি চরিত্র শেষ দিনে প্রদর্শিত হয়েছে। প্রদর্শনী দুটির একটি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর টেলিভিশন এবং অন্যটি আবু শাহেদ ইমনের শর্ট ফিল্ম দ্য কন্টেইনার।
গীতিকার ইমাম লি
ইমাম লি একজন সফল গীতিকার। নিজের মনের কথা দিয়ে গান তৈরী করা যার নেশা। ১৯৯২ সালে এলআরবি’র প্রথম অ্যালবাম ‘স্মৃতি’তে ইমাম লি’র লেখা গান প্রথম গাওয়া হয়। ৯০ দশকে ইমাম লি’র লেখা জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে আলোচিত ব্যান্ড ওরফিউজের গাওয়া ‘ভোরের ট্রেন’, ‘চাঁদনী রাতে’, চট্টগ্রামের শিল্পীদের গাওয়া প্রেমা অন্যতম। চট্টগ্রামের স্পার্ক ব্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় গান ‘সাগরের সৈকতে সেই দিন তুমি’ হোসেন ইমামের লিখা। ‘একটি ছেলে দুঃখ পেলো’, মনসুর হাসানের সেলফ টাইটেল অ্যালবামের ‘নীল কাগজে লেখা’, ওসেন ব্যান্ডের ‘একা একা’ গানগুলো।
২০১০ সালে আইয়ুব বাচ্চুর ‘অনুভবে’ শিরোনামের অ্যালবামটির সব গানই লেখেছেন ইমাম লি। অনেক জনপ্রিয় গানের গীতিকার ইমাম হোসেন তার বেশিরভাগ গানই সুর করেছেন আইয়ুব বাচ্চু।
বিজ্ঞাপন মডেলে ইমাম লি
কিবরিয়া ফারুকীর করা মুসক (ভ্যাট) নিয়ে করা বিজ্ঞাপনচিত্রে মনা চরিত্রে ইমাম লিকে চেনা গেল অন্যরুপে। অসাধারণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এক বিজ্ঞাপনটি। তার করা অন্যান্য বিজ্ঞাপনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জিপিএস ইস্পাত কোম্পানির ‘নারিকেল আর ইস্পাত এর মধ্যে পার্থক্য দেখানো ভিন্ন রকমের বিজ্ঞাপন চিত্র’, বাংলালিংক এর ডিজিটাল ঘটক, বাংলালিংক বস।
লেখক ইমাম লি
৯০ এর দশকে অনেক লেখালিখি করলেও ব্যস্ততার কারণে পরবর্তীতে লিখালিখি কমিয়ে দেন তিনি। ৯০ এর দিকে চট্রগ্রামের ‘হাতেখড়ি’ সাহিত্য সংগঠনে লিখেছেন নিয়মিত। ৯৫ এর বইমেলায় ছোট গল্প সংকলন ”ইথেন” ছিল ইমাম লি’র প্রথম প্রকাশনা। ১৯৯৮ সালে বৈশাখী পাবলিকেশন ‘রুপালি রাত্রি’ প্রকাশ করে। তবে ভবিষ্যতে লেখালেখির চিন্তাভাবনা আছে বলে জানালেন তিনি। আগামী বইমেলার জন্য নতুন একটি বই আসতে পারে বলেও জানলেন তিনি।
বাংলা সিনেমা প্রসংগে ইমাম লি
‘দেখুন বাংলাদেশের মুভি অনেকদূর এগিয়েছে। হাজারো সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অনেক পিছিয়ে আছে এইটা যেমন সত্য, একজন বাংলাদেশী মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ বুসান ফিল্ম ফেস্টিভালের মত বিখ্যাত একটা ফেস্টিভালে সমাপনী মুভি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এইটাও মানতে হবে। এখন অনেক ভাল মুভি হচ্ছে। আশা করছি একদিন দেখব সিউল বা কোরিয়ার সব হলে বাংলা সিনেমা দেখানো হচ্ছে’।
প্রবাস জীবন নিয়ে
‘২৪ বছর হয়ে গেল কোরিয়াতে আছি। কিন্তু ইচ্ছে হয় সবসময় দেশেই থাকি। কিন্তু ব্যবসায়িক কাজ নিয়ে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়। তারপরেও কয়েক মাস পরপরই দেশে ছুটে যাই অনেক সময় ব্যবসায়িক কাজে, আবার অনেক সময় নাড়ির টানে। বাংলাদেশকে ভালবাসি ও সবসময় মিস করি’।
কথা প্রসংগেই জানালেন অবসর সময় পেলেই লং ড্রাইভে যান, বাংলা গান শুনেন তিনি। আড্ডার এক পর্যায়ে কোরিয়ায় বাংলা পত্রিকার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানান। বাংলা টেলিগ্রাফকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন ‘বাংলা টেলিগ্রাফ কোরিয়ায় বাংলা পত্রিকার অভাব পূরণ করেছে। ভবিষ্যতে বাংলা টেলিগ্রাফ অনেক এগিয়ে যাবে’।