Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অন্য যে কোন দেশের নারীদের চেয়ে বেশী বয়সে মা হচ্ছেন কোরিয়ান নারীরা। একদিকে বেশী বয়সে বিয়ে করার প্রবণতা যেমন বাড়ছে, আরেকদিকে বেশী বয়সে গর্ভধারণ করলে বাচ্চার জন্মগত সমস্যা থেকে যেতে পারে- এই ভয়ে বাড়ছে বাচ্চা না নেবার হিড়িকও। এই দুষ্টচক্রে আটকে গিয়ে কোরিয়ার জন্মহার আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ইউরোস্ট্যাট, ওইসিডি, স্টাটিস্টিক্স কোরিয়া ও জাপান ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিক্সের মত একাধিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

korean-motherগবেষণার ফল বলছে কোরিয়ান নারীদের প্রথমবারের মত মা হওয়ার গড় বয়স ৩০.৭ যা ইটালিতে ৩০.৬, জাপান ও স্পেনে ৩০.৪ ও লুক্সেমবার্গে ৩০ বছর। আর বুলগেরিয়ার মেয়েরা মা হচ্ছেন গড়ে ২৫.৭ বছর বয়সেই। হংকং, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোতেও মেয়েরা কোরিয়ানদের চেয়ে কম বয়সে মা হচ্ছেন।

chardike-ad

স্ট্যাটিস্টিক্স কোরিয়ার গত বছরের এক হিসেব বলছে কোরিয়ান নারীরা তাঁদের প্রথম সন্তান নিচ্ছেন গড়ে ৩০.৯৭ বছর বয়সে যা কিনা ১৯৯৩ সালে ছিল ২৬.২৩ বছর। ২০১৩ সালে মা হওয়া কোরিয়ান নারীদের ৬০.৪ শতাংশেরই বয়স ছিল ৩০-এর উপর যেখানে ১৯৯৩ সালে এই বয়সে মা হওয়া কোরিয়ানদের সংখ্যা ছিল শতকরা ১১.৮ জন।

তুলনামূলক চিত্র বলছে ইউরোপের চেয়েও কোরিয়ায় বেশী বয়সে মা হওয়ার হার বেশী। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোরিয়ায় প্রথম মা হওয়ার গড় বয়স ২৬.৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০.৭-এ। বিপরীতে ইটালিতে এই বয়স বৃদ্ধির গড় হার ছিল ২৮.১ থেকে ৩০.৬ বছর, স্পেনে ২৮.৪ থেকে ৩০.৪ বছর, নেদারল্যান্ডসে ২৮.৪ থেকে ২৯.৪ বছর।

বিয়ে-বাচ্চা-পরিবারে কোরিয়ান মেয়েদের অনীহার কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসছে দেশটিতে নারী শিক্ষা ও নারীদের কর্মসংস্থানের অব্যাহত উন্নয়নের বিষয়টি। একুশ শতকের গোড়া থেকেই বিশ্বে উচ্চশিক্ষার অর্জনে সামনের সারিতেই থাকছে কোরিয়া। ২০০০ সালে যেখানে ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী কোরিয়ান মেয়েদের মাত্র ৩৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সনদ নিয়ে বের হয়েছিল, বর্তমানে সেখানে একই বয়সের মেয়েদের গ্র্যাজুয়েট হবার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ শতাংশে। দেড় দশক আগে উল্লেখিত বয়সের মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় জাপান, কানাডা, ফিনল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র সবক’টি দেশেরই পিছনে ছিল কোরিয়ার অবস্থান। আর বর্তমান হিসেব বলছে এই বয়সী মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় কোরিয়ার ধারেকাছেও নেই কেউ (জাপান ৫৯%, কানাডা ৫৭%, যুক্তরাষ্ট্র ৪৪%)।

কোরিয়া ইন্সটিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্সের কর্মকর্তা লি সাং রিম ব্যাখ্যা করছিলেন কেন কোরিয়ায় জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে, “উচ্চশিক্ষিত নারীরা ভালো চাকরি পাচ্ছে। সংগতকারণেই ক্যারিয়ার সামলে নিয়ে বিয়ে করতে তাঁদের দেরী হয়ে যাচ্ছে, কেউ কেউ বিয়েই করছে না। আর বিয়ে যারা করছেন তাঁরাও সন্তান নেবার আগে দু’বার ভাবছেন। এসবরেই সমষ্টিগত প্রভাব পড়ছে ক্রমহ্রাসমান জন্মহারে।”

সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির খাক কেউম জু বলছিলেন কোরিয়ান মেয়েদের সন্তান গ্রহণে অনীহার কারণ প্রসঙ্গে, “পেশাদার কোরিয়ান মেয়েরা ভাবে বাচ্চা নিলে চাকরি আর সন্তানের দেখভালের মাঝে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে তাঁরা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে পারেন।”

কারণ যেটাই হোক জন্মহারে আশংকাজনক হ্রাস ঠেকানোর জন্য এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।