মুখে যত বড় বড় কথাই আমরা বলি না কেন, দিন শেষে আমাদের বেশীরভাগের পড়াশুনার লক্ষ্যটা কিন্তু একটা ভালো চাকরিই। যত বড় ডিগ্রি, তত ভালো চাকরি- এমন তত্ত্বের কোনো স্থান-কাল-পাত্র নেই। সব দেশে, সব কালেই পড়াশুনার পিছনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করে এসেছে বড় চাকরির স্বপ্ন। কিন্তু বাস্তবতা কি সবসময়ই এমন? এক গাদা ডিগ্রিতেই কি মিলছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় পদ? আর পদ পেলেই কি সে অনুযায়ী মাইনে পাওয়া যাচ্ছে? দ. কোরিয়ার চাকুরির বাজার কিন্তু তেমনটা বলছে না।
সবচেয়ে বেশী স্নাতক-স্নাতকোত্তর সনদধারী শিক্ষার্থী আছে, এমন দেশসমূহের মধ্যে উপরের দিকেই থাকা দ. কোরিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ চাকরির বাজারে দাম বাড়াতে সামান্যই ভূমিকা রাখছে। এমনকি উন্নত অনেক দেশে স্নাতক পাশ না করেই যে বেতনের চাকরি মিলছে, কোরিয়ার স্নাতক পাশরা মাইনে পাচ্ছেন তাদের থেকেও কম! ওইসিডিভুক্ত (অরগ্যানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট) দেশসমূহের উপর চালানো এক সমীক্ষার ফল এমন তথ্যই দিচ্ছে।
সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে কোরিয়ায় একজন বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট মাসে গড়ে ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার (সাড়ে ১২শ’ ডলার) উওন মাইনে পাচ্ছেন যেখানে ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোতে একজন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের গড় মাসিক বেতন ১৬ লক্ষ উওন (প্রায় ১৪শ’ ডলার)। এছাড়া কোরিয়াতে কারিগরি মাধ্যমে পড়াশুনা শেষ করে গড়ে ১১ লাখ ৫০ হাজার আর উচ্চতর সনদধারী শিক্ষার্থীরা গড়ে ২০ লাখ উওন মাসিক সম্মানী পাচ্ছেন।
কোরিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সনদধারীদের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পাস চাকরিজীবীদের বেতনের (গড়ে ১০ লাখ উওন) পার্থক্যও খুব বেশী নয়, গড়ে সাড়ে ৪ লক্ষ উওনের মত (৪শ’ ডলারেরও কম)। এই পার্থক্য দিনকে দিন আরও কমছেই। কোরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলছিলেন এর কারণ সম্পর্কে, “চাকরির বাজার ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা তরুণরা বাধ্য হয়েই এমন সব চাকরি করছে যেসব চাকরি তাদের করার কথা নয়। ফলে সংগত কারণেই তুলনামূলক কম শিক্ষিতদের সাথে তাঁদের বেতনের পার্থক্য কমে যাচ্ছে।”
বড় ডিগ্রিতে বড় চাকরি- এই তত্ত্ব প্রায় সব দেশেই সমান প্রযোজ্য হলেও স্থানভেদে তারতম্য দেখা যায় রোজগারের ব্যবধানে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ থেকে পাশ করে যারা চাকরি করছেন তাঁরা হাই স্কুল পাশদের থেকে গড়ে ৭৫ শতাংশ বেশী বেতন পাচ্ছেন। আবার নরওয়ে, সুইডেনের মতো দেশ যেখানে কারিগরি শিক্ষা জনপ্রিয় সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় সনদধারীরা মাত্র ৩০ শতাংশ বেশী আয় করছেন।