হুমায়ুন কবির ও সৈয়দ মারুফ হাসান, দু’জনেরই রাজধানীর অভিজাত এলাকায় রয়েছে সুসজ্জিত অফিস। সেই অফিসে বসেই আঁকা হয় প্রতারণার ছক। এটাকেই বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। দাপটের সঙ্গে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তারা সফলভবে প্রতারণা করে আসছিলেন। হাজার থেকে লাখ, কারও কারও কাছ থেকে কোটি টাকাও হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র।
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে দেয়া হয় লোভনীয় বেতনের প্রস্তাব। এরপর তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়েই চম্পট। আবার অন্য কোথায়ও অফিস ভাড়া নিয়ে একই কায়দায় ছড়িয়ে দেয় নিজেদের প্রতারণার জাল। কখনোবা সরকারি চাকরি দেয়ার নাম করে প্রচুর টাকা হাতায়। আবার কখনো ব্যবসায় অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে চম্পট দেয় লাখ লাখ টাকা নিয়ে। এভাবে দীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নানান ফন্দিফিকির এটে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল এ চক্রটি।
সম্প্রতি একটি অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে এই পেশাদার প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তারা হলেন- হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মারুফ হাসান, শাহাবুদ্দিন ও জামাল শেখ।
গত মঙ্গলবার রাতে উত্তরার সেক্টর-১২, রোড-৫ এর ৪৪ নম্বর বাড়ি থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা অভিজাত এলাকায় সুসজ্জিত অফিস খুলে আকর্ষণীয় বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা বারিধারায় কথিত নাতান গ্রুপ নামে একটি বায়িং হাউজ খোলে এবং পত্রিকায় ওই কোম্পানির বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয়। বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে একাধিক ব্যক্তি আবেদন করে। একপর্যায়ে কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (একাউন্টস) পদে চাকরি হয়ে গেছে জানিয়ে এক ভুক্তভোগীকে অফিসে যেতে বলা হয়। আবু হেনা নামে ওই ভুক্তভোগী অফিসে যাওয়ার পর আবেদনকারীর সামনে প্রতারক চক্র মোবাইল ফোনে কথিত বিদেশির সঙ্গে শিপমেন্টের বিষয়ে কথা বলে। কথোপকথনের একপর্যায়ে চট্টগ্রাম পোর্টে তাদের কোম্পানির মালামালের একটি লাভজনক চালান আটকে আছে, টাকার অভাবে চালানটি খালাস করা যাচ্ছে না বলে জানায়।
২৫/৩০ লাখ টাকা হলে মালগুলো খালাস করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে আবু হেনাকে টাকার বিনিময়ে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হওয়ার প্রস্তাব করা হয়। আবেদনকারী প্রতারকদের প্রতারণায় প্রলুব্ধ হয়ে ২৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রতারকদের হাতে তুলে দেন আবু হেনা। এর ২-৩ দিন পর অফিসে যোগদান করতে গেলে তিনি অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পান।
এরপর প্রতারক চক্র উত্তরায় আরেকটি অফিস খুলে প্রতারণা শুরু করে। উত্তরার সেই অফিস থেকে মঙ্গলবার রাতে প্রতারক চক্রের মূলহোতা হুমায়ুন কবিরসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারুফ ও হুমায়ুন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন। তারা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অফিস নিয়ে ছদ্মনাম, পরিচয় ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে প্রতারণা করে আসছিলেন। ওই চক্রে আরো ৪ থেকে ৫ জন রয়েছে। তাদের ধরতেও অভিযান চলছে বলে জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক।