ভারতীয় রাজনীতিতে এই মুহূর্তে হটেস্ট টপিক গরু। এক দিকে গরুর গোশত খাওয়ার গুজবের জেরে কেউ খুন হচ্ছেন, অন্য দিকে কেউ বা গরুকে জাতীয় মাতা ঘোষণার দাবি তুলছে। গোবর, গরুর গোশতের পর ফের আর একবার ফিরে এল গোমূত্র থিওরি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মানেকা গান্ধী বেশ কয়েক দিন আগেই ফিনাইলের পরিবর্তে গোমূত্র ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এবার তারই প্রতিফলন শোনা গেল মুম্বইয়ের কংগ্রেস করপোরেটর পরমিন্দর ভর্মার কথায়। এই কংগ্রেস কর্মী তার সুস্বাস্থ্যের ক্রেডিট গরুকেই দিলেন। একদিকে গোরুর দুধ যেমন তাকে পুষ্টি জুগিয়েছে, অন্যদিকে গোমূত্র নাকি বহুদিন ধরেই তার ঘর বাড়ি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছে। ধ্বংস করেছে জীবাণু। এবার তাঁর দাবি, গোটা মুম্বই জুড়েই হাসপাতাল গুলি পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যবহার করা হোক গোমূত্র।
‘‘বছরের পর বছর ধরে আমার বাড়ি জীবাণু মুক্ত রাখতে গোমূত্র ব্যবহার করছি। খুব সহজেই এটি মেলে। আমি তো বাড়ির পাশে গোয়াল থেকে গোমূত্র নিয়ে আসি। আমি নিশ্চিত, এমনকি হাসপাতাল গুলো সাফ করতেও দারুণ কাজে আসবে গোমূত্র’’। মন্তব্য করেছেন পরমিন্দর ভর্মা।
মালাডের এই করপোরেটরের ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাব নিয়ে পৌঁছে গেছেন বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কাছে। দাবি, এবার থেকে ফিনাইলের পরিবর্তে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবহার করা হোক গোমূত্র।
সত্যি সত্যি গোমূত্র হাসপাতাল পরিষ্কারে আদৌ কাজে আসবে কিনা সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র কোনও ধারণা নেই বিএমসি কর্তাদের। কিন্তু গরু নিয়ে দেশ জোড়া স্পর্শকাতরতা এতই তুঙ্গে যে, এই প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে ফেরাবার ‘দুঃসাহস’টুকু তারা দেখাতে পারেননি। এই বিষয়ে আপাতত টুঁ শব্দ করতেও নারাজ তারা।
বিএমসি-র অধীনস্থ হাসপাতালগুলির দায়িত্বে এই মুহূর্তে আছেন ডাঃ মহেন্দ্র ওয়াদিওয়াল। তিনি বলেছেন ‘‘আয়ুর্বেদ বলছে প্রাচীন যুগে ঘর দোর পরিষ্কার করতে গোমূত্র ব্যবহার করা হোত। তবে হাসপাতালে এটি ব্যবহার করা যাবে কিনা সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।’’
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানাচ্ছেন এই দাবি ভিত্তিহীন। বম্বে ভেটরনারি কলেজের ডিন ডঃ ভিএল দেওপুরকরের বক্তব্য ‘‘জীবাণুনাশক হিসেবে গোমূত্র ব্যবহারের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। দুঃখের বিষয় এদেশের বহু রাজনীতিক ভয়ানক অশিক্ষিত। চাষের জন্য গোমূত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু পরিচ্ছন্নতার জন্য কখনো নয়।’’