জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে হার মানে আফগানিস্তান। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়লাভ করলেও তৃতীয়টিতে হার মানে।
আবার চতুর্থ ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা আনে তারা। কিন্তু এরপর যা করেছে তা স্বপ্নলোকের কল্পনাকেও হার মানায়।
সিরিজে শেষ ওয়ানডে ম্যাচ জিতে প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ল আফগানরা। তাও আবার জিম্বাবুয়ের মাটিতে। আর ইতিহাস গড়া এ দলকে তত্ত্বাবধান করেন পাকিস্তানের সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইনজামাম-উল-হক।
ক্রিকেটার হিসেবে এক সময় দাপট দেখিয়েছেন এই মুলতানের সুলতান। এবার নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজের জাত চেনালেন।
শনিবার সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান সংগ্রহ করে খোরাসানের সিংহ খ্যাত আফগানরা। জবাবে ৪৪.১ ওভারে ১৭২ রানেই অলআউট হয় ডেভ হোয়াট মোরের শিষ্যরা।
ফলে ৭৩ রানের দারুণ এক জয় পায় আফগানিস্তান। পাশাপাশি তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ে।
এবারই প্রথম কোনো জাতীয় দলের পূর্ণাঙ্গ কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন ইনজামাম-উল-হক। তাও মাত্র ২৫ দিনের জন্য। এরপরই তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু শেষতো নয়, এ যেন নতুন কিছুর শুরু। এরপর যদি ইনজামাম আফগানিস্তানের কোচেরি ভূমিকায় নাও থাকেন তবু তিনি দেশটির ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে থাকবেন।
কারণ, তার হাত ধরেই যে প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সিরিজ জিতেছে। এ অর্জন যে যেনতেন অর্জন নয়।
শনিবার শেষ ওয়ানডেতে টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৩৫ রানেই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদকে হারায় (২৬) তারা। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলীয় স্কোরকে ১৩২ রান পর্যন্ত টেনে নেন নুর আলী জাদরান ও মোহাম্মদ নবী। এ যাত্রায় হাফ সেঞ্চুরি করেন নুর আলী জাদরান। তবে দলীয় ১৩২ রানে ব্যক্তিগত ৫৪ রানে আউট হন তিনি।
এরপর নবীর সঙ্গে এসে জুটি গড়েন আসগর স্তানিকজাই। নবী হাফসেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর দলীয় ১৬০ রানে আউট হন। এরপর ছোট ছোট জুটি গড়ে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা।
বল হাতে জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা তিনটি করে উইকেট নেন। জংউয়ি ও পানিয়াঙ্গারা একটি করে উইকেট নেন।
২৪৬ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে জিম্বাবুয়ে। তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম হয়ে দেখা দেন শন উইলিয়ামস। একপ্রান্ত আগলে রেখে বুক চিতিয়ে লড়াই করে যান তিনি। খেলেন অনবদ্য ১০২ রানের ইনিংস। যা তার ক্যারিয়ারের মেইডেন সেঞ্চুরি। কিন্তু সতীর্থদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় বিফলে যায় তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।
১০২ রানের ইনিংসে উইলিয়ামস চার ছক্কা ও তিনটি চারের মার মারেন। তার ১০২ রানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ রান আসে বোলার জংউয়ির ব্যাট থেকে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪ রান করেন চিগম্বুরা। ১০ রান আসে সিসোরোর ব্যাট থেকে। বাকিদের কেউ দুই অঙ্কের কোটা ছুঁতে পারেননি।
বল হাতে আফগানিস্তানের দৌলত জাদরান চার, আমির হামজা তিন, রশিদ খান দুই ও আশরাফ একটি উইকেট নেন।
আফগানিস্তানের দৌলত জাদরান ও জিম্বাবুয়ের শন উইলিয়ামস যৌথভাবে ম্যাচসেরা হন। আর সিরিজ সেরা হন মোহাম্মদ নবী।