উত্তরা আদর্শ আবাসিক শহর (৩য় পর্ব) প্রকল্পে এই দোকান করেছেন হান্নান। এখনও সেভাবে উঠেনি ঘর-বাড়ি। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে পুরোদমে।
পিচ ঢালাই রাস্তা আর লেকের উপরে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ দেখলেই মন ভরে যায় যে কারো। পিচ ঢালাই রাস্তার দুই পাশেই দৃষ্টিনন্দন কাশবন। গোধূলীতে সৌন্দর্য উপভোগে মানুষের কমতি হয় না কখনও। আর তাদের কাছেই এটা ওটা বেচে দুই-চার পয়সা করে আয় করেন হান্নান।
ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই দোকানি জানালেন, ২০ বছর ধরে এই এলাকায় বাস করছেন তিনি। এখন যেখানে রাস্তা সেখানে নৌকা চালাতেন তিনি, ধরতেন নানা জাতের মাছ।
তখন ছিল তার টানাপোড়েনের সংসার। কিন্তু সরকারের বিশেষ এই উদ্যোগে আধুনিক শহরের সুবিধা পেয়েছেন হান্নান। প্রকল্পের কাজে যারা নিয়োজিত তাদের কাছে বেচা-বিক্রি করেই এখন তিনি ভালোভাবে সংসার চালাচ্ছেন। এভাবে অনেক মানুষই উপকৃত হয়েছেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে। কর্মসংস্থান হয়েছে বহুজনের।
প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৯২ শতাংশ মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও চলছে। প্রকল্পে অভ্যন্তরীণ রাস্তা ১৬৫ কিলোমিটার। ৭৭ শতাংশ রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। লেক উন্নয়ন ও সংরক্ষণ কাজ শেষ হয়েছে ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১২টি ব্রিজের মধ্যে ছয়টি ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে।
প্রকল্পটি ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ সেক্টর নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে ১৫ ও ১৬ নং সেক্টরে বিদ্যুৎ সরবারহের লক্ষ্যে ডেসকো বৈদুতিক খুঁটি স্থাপনের কাজ শেষ করেছে। ১৭ নম্বর সেক্টরে খুঁটি স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্প এলাকায় যেকোনো গ্রাহক বিদ্যুতের সংযোগের জন্য আবেদন করলে ডেসকো সংযোগ দেবে।
পানি সরবরাহের জন্য ঢাকা ওয়াসাকে গভীর নলকূপ স্থাপনে ১৭টি জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ওয়াসাকে লিখেছেন প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ওয়াসা আরও ১০টি জায়গায় গভীর নলকূপ স্থাপন করতে চায়। সেগুলোর নকশা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। পাশাপাশি তিতাস গ্যাস কোম্পানির চাহিদা মোতাবেক প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রকল্পে সর্বমোট প্লটের সংখ্যা আট হাজার ১১৩টি। ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার ৯৯৬টি প্লট এস্টেট শাখায় হস্তান্তর করা হয়েছে, যা মোট প্লটের ৬০ শতাংশ। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আরও দুই হাজার প্লট হস্তান্তর করা হবে।
নগরীর আবাসন চাহিদা মোকাবেলায় ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উত্তরা মডেল টাউনের ১৪ নম্বর সেক্টর সংলগ্ন দুই হাজার আট একর জমি নিয়ে “উত্তরা তৃতীয় পর্ব প্রকল্প” গ্রহণ করা হয়।
তখন এর ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৪৪ কোটি টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০০২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু সময়মতো জমি অধিগ্রহণ কিংবা উন্নয়ন কাজ কোনোটাই শুরু করতে পারেনি রাজউক। ফলে ২০০৬ সালে প্রকল্প সংশোধন করা হলে ব্যয় দাঁড়ায় দুই হাজার ৩৪০ কোটি টাকা এবং প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০০৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। নতুন বেধে দেয়া সময়েও প্রকল্প শেষ হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ বর্ধিত সময় শেষ হতে আর বাকি মাত্র তিন মাস।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক গোলাম মোস্তফা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ করতে পেরেছি। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে পারবো’।
রাজউকের চেয়ারম্যান জি এম জয়নাল আবেদিন ভূঁইয়া বলেন, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। অনেক বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। আর বেশি দেরি হবে না। শিগগির কাজ শেষ হবে’।