মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটিতে আবাসিক এলাকায় কার্যক্রম চালাচ্ছে ইবাইস ইউনিভার্সিট। একই এলাকার ইকবাল রোডে চলছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি। উত্তরার আবাসিক এলাকায় চলছে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযে কার্যক্রম।
আবাসিক ভবন বা বাণিজ্যিক ভবনের একটি বা দুটি ফ্লোর ভাড়া দিয়ে কার্যক্রম চলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের চেয়েও কম জায়গায় নিয়ে চলছে শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো।
অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন বলছে, চালুর পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচ একর জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে হবে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছর পার হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হিসাব বলছে, ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বার বার স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার তাগিদ দিলেও কাজ হচ্ছে না।
মঞ্জুরি কমিশনের এক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারকে জিম্মি করে ফেলেছে। তারা কোনো নির্দেশনাই মানছে না। শুধু কালক্ষেপণ করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই তারা আদালতে যায়। আদালতের আদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালায়। ফলে ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণায়ের কোনো কিছুই করার থাকে না’।
বিভিন্ন সময় ওজর-আপত্তি দেখিয়ে তারা শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকার কঠোর হলে আদালতের দারস্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা। এভাবে বছরের পর বছর তারা অবৈধভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের বিরুদ্ধে সরকার বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নিয়েছিল।কিন্তু ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এরমধ্যে কুইন্স ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় দুটি সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু আদালতের আদেশ নিয়ে তারা ফের শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে।
সর্বশেষ গত ১৩ আগস্ট স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় সরকার। বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু বাস্তবায়ন করেছে তার প্রতিবেদন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) জমা দিতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ মেনে চলছেন না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, আবার নিজস্ব ক্যাম্পাসেও নির্ধারিত সময়ের পরও যেতে পারেনি তারা। ফলে তারা সরকারের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এজন্য তাদেরকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এবার দেখা যাক তারা কি করে।
এমন হুঁশিয়ারি অবশ্য এর আগে নানা সময়ে দিয়েছিলো সরকার।
২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি এক বৈঠকে চলতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলে সনদ বাতিল এবং নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছিল ওই সময় জারি করা এক নির্দেশনায়।
এছাড়া ২০১০ ও ২০১২, ২০১৩ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাস চালু করতে তিন দফা সময় দেওয়া হয়েছিল।
ইউজিসি বলছে, সাত বছর ধরে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে ৫০টি। এদের ১১টি পুরোপুরি নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে; সাতটি আংশিক স্থানান্তর করেছে; নয়টি জমি কিনেছে; ১৭টির নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণাধীন রয়েছে।
২৫ বিশ্ববিদ্যালয় আইন অমান্য করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এদের তিনটি আদালতে স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছে, ১৭টি চলছে মামলা করে।
নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নিজস্ব ক্যাম্পাস করতে পেরেছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি।