একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের চূড়ান্ত রায়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের যে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল, আপিল বিভাগ তার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে।
বুধবার বিকেলে এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের আপিলের চূড়ান্ত রায় প্রকাশ করা হয়েছে। সেটি সবার জন্য সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।’
আর ২০১৫ সালের ১৬ জুন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের একই আপিল বেঞ্চ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ড রায়ের বিরুদ্ধে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং ১১ আগস্ট আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ খালাস চেয়ে আপিল করেন।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এবং ১৭ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করে।
হরতালে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের একটি মামলায় ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। পরে ১৯ ডিসেম্বর তাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের ২৩টি অভিযোগে ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে তার বিচারকাজ শুরু হয়।
অন্যদিকে, ২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।
নিয়ম অনুযায়ী, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সেটি হাতে পেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবে ট্রাইব্যুনাল। সেই মৃত্যু পরোয়ানা ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ।
পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামিপক্ষ। আদালত তা পুনর্বিবেচনার জন্য গ্রহণ করলে শুনানি করে নিষ্পত্তি হবে, আর রিভিউ খারিজ করলে সেদিনই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে।
রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে।
দুই জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় বাস্তবায়নের আগে পালিত প্রক্রিয়াগুলো এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকছে।