পবিত্র মক্কার মিনায় ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১২০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন ১৫০০ জনেরও বেশি। সৌদি বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের বরাত দিয়ে ইরানের আলমানার টেলিভিশনের ওয়েবসাইট এই খবর দিয়েছে। সৌদি সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুযায়ী মিনার বিপর্যয়ে ৭১৭ জন নিহত এবং আহত হয়েছে আরও বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় হজের শেষ প্রধান আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর মারার সময় প্রচণ্ড ভিড়ে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। সড়ক নম্বর ২০৪ ও ২২৩ দিয়ে বিপুল সংখ্যক হজযাত্রী আসতে থাকলে এই মহা-বিপর্যয় ঘটে বলে দুর্যোগ বিষয়ক সৌদি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।
সৌদি যুবরাজ নায়েফ এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে কোনো কোনো সূত্র বলেছে, সৌদি রাজার ছেলের গাড়ি বহর মিনা শহরের কেন্দ্রস্থলে আসায় তীব্র ভিড় দেখা দেয়া এবং মূলত এ কারণেই পদপিষ্ট হয়ে হজযাত্রীদের মৃত্যু ঘটেছে।
লেবাননের আরবি দৈনিক আদদিয়ার লিখেছে, শাহজাদা মুহাম্মাদ বিন সালমানের গাড়ি বহরই প্রাণঘাতী এই বিপর্যয় সৃষ্টির মূল কারণ। তার বিপুল গাড়ি বহর ও নিরাপত্তা প্রহরা মিনার প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা দখল করে নেয়। শাহজাদার সঙ্গে ছিল ২০০ সেনা ও ১৫০ পুলিশ কর্মকর্তা।
সৌদি সরকার এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য হজের সময় মিনায় সালমানের সফর বা তার উপস্থিতি সংক্রান্ত খবর প্রচার নিষিদ্ধ করেছে বলে লেবাননি দৈনিকটি উল্লেখ করেছে।
কিন্তু সৌদি আরবের সরকারি কর্মকর্তারা সালমানের উপস্থিতির কারণে মিনা ট্র্যাজেডি ঘটার খবরকে ‘সঠিক নয়’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং এই বিপর্যয়ের জন্য হজযাত্রীরাই দায়ী বলে দাবি করেছেন। তাদের একজন বলেছেন, হজযাত্রীরা দিক-নির্দেশনা মেনে চললে এ দুর্ঘটনা হয়ত এড়ানো যেত।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে (মক্কা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে) বলা হয়েছে, ইরানি কর্মকর্তারা বলেছেন, হজযাত্রীরা যেসব সড়ক দিয়ে এসে শয়তানের প্রতীকী স্তম্ভে পাথর মেরে ওই এলাকা থেকে চলে যান সেইসব সড়ক দিয়ে হঠাৎ সেইসব সড়কের মধ্যে দু’টি সড়ক বন্ধ থাকায় ভিড় এড়াতে বা পালিয়ে যেতে ব্যর্থ হন হজযাত্রীরা। এ ছাড়াও পাথর মারতে আসা হজযাত্রীদের একমুখী চলাচলের একটি সড়ককে হঠাৎ দ্বিমুখী করা হয় বলে অভিযোগ শোনা গেছে।
ইরান এই দূর্ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে এবং দেশটিতে তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে।
সৌদি সরকারের হজ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার কারণে প্রায়ই হজের সময় নানা দূর্ঘটনা ঘটছে। মাত্র প্রায় দুই সপ্তাহ আগে মসজিদুল হারামে একটি ক্রেন ভেঙ্গে পড়ার ঘটনায় প্রায় ১২০ জন হজযাত্রী নিহত হয়েছে। মিনায় পদপিষ্ট হয়ে হজযাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ২০০৬ সালেও। এ অবস্থায় পবিত্র হজের মত একটি আন্তর্জাতিক ও বিশ্ব-সমাবেশ আন্তর্জাতিক তথা বহুজাতিক ব্যবস্থাপনায় হওয়া উচিত বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দাবি ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। -আইআরআইবি