ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই শক্তিধর দেশ জার্মানি ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদ্বয় ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টেইনমায়ার ও লরাঁ ফ্যাবিউস ‘ঐতিহাসিক’ এক যৌথ সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সোমবার সকাল ৮টায় বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জার্মান ও ফরাসি মন্ত্রী সরাসরি চলে যান সাভারে। সেখানে বংশী নদীতে নৌভ্রমনের মধ্য দিয়ে তারা বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পর্যবেক্ষণ করবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চলমান একটি প্রকল্পের কার্যক্রম দেখতে তাদের পটুয়াখালীতে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়।
কিয়োটো প্রোটোকল তামাদি হয়ে যাওয়ায় বিশ্ব যখন আসন্ন প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে নতুন একটি চুক্তি দেখার অপেক্ষায়, তখনই বাংলাদেশে ইউরোপীয় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর।
তারা ঢাকার বারিধারায় নির্মাণাধীন প্রথম ‘ফ্রাঙ্কো-জার্মান’ যৌথ দূতাবাস ভবনের ‘টপিং অফ’ অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকবেন। কোনো ভবনের মূল কাঠামো নির্মাণের সময় শেষ স্টিল বিমটি জায়গামত বসানো উপলক্ষে এই ‘টপিং অফ’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নির্মাণ কাজের কাঠামোগত অংশের কাজ সমাপ্তির প্রতীকী উদযাপন এটি।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী ইউরোপীয় দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরকে অভিহিত করেছেন ‘ঐতিহাসিক’ এক ঘটনা হিসেবে, কেননা বাংলাদেশে এ ধরনের যৌথ সফর এই প্রথম।
এক সময়ের দুই বৈরী দেশ ফ্রান্স ও জার্মানি একজোট হয়েছিল ১৯৬৩ সালে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এলিসি চুক্তির মধ্য দিয়ে। ওই চুক্তিকে দেখা হয় পুনর্মিলনের প্রতীক হিসেবে, যা ‘ফ্রাঙ্কো-জার্মান’ বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ভবিষ্যত রূপরেখা ঠিক করে দিয়েছিল। এলিসি চুক্তির ৪০ বছর পূর্তির পর ২০০৪ সালে ফ্রান্স ও জার্মানি ঢাকায় একটি যৌথ দূতাবাস প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ভিত্তিস্থাপন হয় ২০১৩ সালে, এলিসি চুক্তির সূবর্ণজয়ন্তীতে।
ইউরোপের এ দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার সময়ও বাংলার মানুষ জার্মানি ও ফ্রান্সের সমর্থন পেয়েছে। ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা জার্মানি। সেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ও জার্মানির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি ডলার, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ রপ্তানি করে। আর ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে জার্মানি ও ফ্রান্সের সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে।
সাভার থেকে ফিরে দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেবেন দুই ইউরোপীয় অতিথি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তাদের সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। ঝটিকা এই সফর শেষে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে রাত পৌনে ১০টায় প্যারিসের উদ্দেশে রওনা হবেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টেইনমায়ার ও লরাঁ ফ্যাবিউস। বিডিনিউজ।