Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

pornগবেষণায় পর্নো আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়ানক প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে হেরোইন আসক্তিকেও হার মানায়। মাদক গ্রহণ যেমন মানুষের মধ্যে নেশা বা আসক্তি হিসেবে কাজ করে তেমনি পর্নোগ্রাফিও আসক্তি হিসেবে কাজ করে মন-মস্তিষ্ক ও দেহে।

মাদকাসক্ত থেকে যেমন অনেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জাড়িয়ে পড়ে তেমনি পর্নোগ্রাফি আসক্তি থেকেও নানা ধরনের অপরাধের জন্ম নিচ্ছে। আসক্তদের মধ্যে দেখা দেয় নানা ধরনের বিকৃতি। এর প্রভাবে ব্যক্তি, পরিবার এবং সামাজিক জীবনে দেখা দেয় নানা বিপর্যয়।

chardike-ad

সম্প্রতি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পর্নোগ্রাফি আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়ানক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সাধারণত ১৩ বছরের কিশোররা ইন্টারেনট পর্নোতে বেশি আগ্রহী এবং তারা মেয়েদেরকে যৌনতার একটি বিষয় হিসেবে চিন্তা করতে শুরু করে। প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয় , নিষ্পাপতার দিন শেষ হয়ে গেছে। মানুষ এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক কিছুই জানতে পারে।

এটা হচ্ছে ঘরে হেরোইন রেখে শিশুকে ছেড়ে দেয়ার মতো। কিছু ডাক্তার অবশ্য বলেছেন, যারা অতিরিক্ত পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত তারা মাদকাসক্তদের চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছে। প্রমাণ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী জেফরি সেটিনোভার বলেন, আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে পর্নোগ্রাফির কেমিক্যাল আসক্তি হেরোইনের মতোই। শুধু প্রয়োগটা ভিন্ন।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত তাদের মস্তিষ্কে মাদকাসক্তদের মতোই নেশা কাজ করে। মাদক গ্রহণের ফলে আসক্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের যে অংশে অনুভূতি কাজ করে ঠিক সেই অংশই উদ্দীপিত হয়ে ওঠে আসক্তরা যখন পর্নো দেখে।

মাদকাসক্তদের যেমন স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে, বিপর্যয় বিশৃঙ্খলা নেমে আসে তেমনি পর্নো আসক্তরাও ধীরে ধীরে অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে এবং বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়।

তাই তরুণসমাজকে রক্ষায় ক্ষতিকর ওয়েবসাইট বন্ধের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।

পর্নোগ্রাফি এবং পর্নো আসক্তি নিয়ে সারা বিশ্বে নানা ধরনের গবেষণা এবং সমীক্ষা চলছে। তুলে ধরা হচ্ছে এর ক্ষতিকর দিক। এক দিকে যেমন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে পর্নো অন্য দিকে কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

এমনকি পর্নোগ্রাফিতে অভিনয়ের জগৎ থেকে ফিরে এসে কেউ কেউ জনসমক্ষে তুলে ধরছেন অন্ধকার জগতের কথা। তাদের মতে অনেকে পর্নোজগৎকে স্বেচ্ছায় বেছে নিলেও উল্লেøখযোগ্য একটি অংশ রয়েছে, যাদেরকে বাধ্য করা হয় এ জগতে প্রবেশ করতে।

অনেকে কিভাবে মানবপাচারকারী খপ্পরে পড়ে পর্নোগ্রাফিতে অভিনয় করতে বাধ্য হচ্ছে সেসব বিষয়ও তুলে ধরা হচ্ছে। এমনকি শিশুদের দিয়ে কিভাবে জোর করে পনোগ্রাফি তৈরি করা হচ্ছে তারও অনেক লোমহর্ষক বিবরণ উঠে আসছে নানা গণমাধ্যমে।

সম্প্রতি পর্নোগ্রাফির অন্ধকার জগৎ থেকে ফিরে এসে একজন অভিনেত্রী একটি বই লিখে প্রকাশ করেছেন কিভাবে চক্রের শিকার হয়ে তিনি পর্ণো ছবিতে অভিনয় করতে বাধ্য হয়েছেন এবং তার ওপর কিভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে। এরপর তিনি বইতে দর্শকদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখেছেন, এরপরও কি আপনারা পর্নো দেখতে আগ্রহী হবেন?

নৈতিকতার দিক ছাড়াও শরীর এবং মনোবৃত্তি কোনো দিক দিয়েই যে এটা কল্যাণকর নয় সেসব বিষয়ও তুলে ধরার চেষ্টা করছেন অনেকে বিভিন্ন ধরনের গবেষণার মাধ্যমে।

বিভিন্ন সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পর্নো আসক্তরা একধরনের ফ্যান্টাসিতে ভোগে এবং বাস্তব জীবনেও তারা পর্নো নায়িকার মতো সঙ্গিনী চায়। আর তা না পাওয়ায় তাদের অনেকেই বাস্তব জীবনে সুখী হতে পারে না। কোনো কোনো সমীক্ষায় বলা হয়েছে অধিক পর্নো আসক্তদের অনেকেরই অনুভূতি ধীরে ধীরে ভোঁতা হয়ে যায় এবং বাস্তব জীবনে সঙ্গিনীর প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকে।

কারণ তাদের মন-মগজে স্থান করে নেয় পর্নো চরিত্রগুলো। কেবল সেগুলোতেই তারা উদ্দীপিত হয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে এসব সমীক্ষায়। এর ফলে তাদের মধ্যে নেমে আসে হতাশা। এভাবেই পর্নো আসক্তি থেকে ধীরে ধীরে জন্ম নেয় পারিবারিক অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা।