বিভিন্ন কারণে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ ঘন ঘন উঠে এসেছে উত্তর কোরিয়ার নাম। নিজেদের নিয়ে পড়ে থাকা দেশটি নিয়ে তাই অন্যদের আগ্রহ বেড়েছে।
বিচিত্র তথ্যপ্রেমীদের আগ্রহ মেটাতেই উত্তর কোরিয়ার অজানা কিছু অধ্যায় নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন :
সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম
এত এত উন্নত দেশ থাকতে শেষে কিনা উত্তর কোরিয়াই সবচেয়ে বড় স্টেডিয়ামের মালিক হয়ে গেল। দর্শক ধারণ ক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যালারিটা হলো উত্তর কোরিয়ার মে ডে স্টেডিয়াম। রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে অবস্থিত এ স্টেডিয়ামে একসঙ্গে খেলা দেখতে পারবে দেড় লাখ দর্শক। স্টেডিয়ামটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮৯ সালে। ফুটবল ছাড়াও অলিম্পিক প্রতিযোগিতার জন্য এ স্টেডিয়ামটি ব্যবহৃত হয়।
গাঁজা যেখানে বৈধ
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় আইনে মাদকের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দেশটিতে মারিজুয়ানা তথা গাঁজা বৈধ এবং এটাকে মাদক বলে গণ্য করা হয় না। আইনগত বৈধতা থাকায় মারিজুয়ানা সেবনের দায়ে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না দেশটির পুলিশ। অন্য সব মাদকের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও অন্তত গাঁজার জন্য পিয়ংইয়ংকে স্বর্গরাজ্যই বলা যায়। অবশ্য ওষুধ হিসেবেও এখানে এটি ব্যবহৃত হয় বেশি।
মার্কিন সেনা
ভালো জীবনের সন্ধানে উন্নত দেশে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা থাকে দরিদ্র দেশের নাগরিকদের। তবে উল্টোটাও ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার জেমস যশেফ ড্রেসনক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসী হয়ে তিনি এখন উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দা। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত ছিলেন ড্রেসনক। এক সময় যোগ দেন মার্কিন সেনাবাহিনীতে। ১৯৬০ সালে দুই কোরিয়ার যুদ্ধে তাকে দুদেশের মধ্যবর্তী কোরীয় অসামরিক অঞ্চলে পাঠানো হয়। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পালিয়ে যান উত্তর কোরিয়ায়।
১৯৬২ সালের ১৫ আগস্ট উত্তর কোরিয়ার সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণের পর শুরু হয় তার দ্বিতীয় জীবন। ড্রেসনকের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন আরও কয়েকজন। এরা হলেন ল্যারি অ্যালেন অ্যাবশিয়ার, জেরি পারিস, চালস রবার্ট। রেডিও টেলিভিশনসহ নিজের সব গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াবিরোধী প্রপাগাণ্ডায় তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে পিয়ংইয়ং। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈসাদৃশ্যসহ নানা কারণে ইউরোপে পালানোর পরিকল্পনা নেয় তারা। ১৯৬৬ সালে সোভিয়েত দূতাবাসের কাছে আশ্রয় চাইলে তাদের আবার পিয়ংইয়ংয়ে হস্তান্তর করা হয়। সশ্রম গৃহবন্দি হন সবাই। অন্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন ড্রেসনক। ধীরে ধীরে কোরিয়ান ভাষা ও সংস্কৃতি আয়ত্ত করে পিয়ংইয়ংয়ের একটি অ্যাপার্টমেন্টে কোরিয়ান স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভালোই দিন কাটাতে থাকেন।
পিয়ংইয়ংয়ের করায়ত্তে মার্কিন জাহাজ
১৯৬৮ সালের ২৩ জানুয়ারি। উত্তর কোরিয়া থেকে ১৫ মাইল দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় কোরিয়ার নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে মার্কিন নৌজাহাজ ইউএসএস পুয়েবলো। পরিণামে পিয়ংইয়ংয়ের হস্তগত হয় জাহাজটি। এর নাবিকরা বন্দি হয়। প্রায় এক বছর নানা নির্যাতন ভোগের পর ক্রুদের মুক্তি দিলেও জাহাজটি আর ফেরত দেয়নি পিয়ংইয়ং। এটাই মার্কিন নৌবাহিনীর একমাত্র জাহাজ যা কোনো বিদেশি বাহিনীর হাতে আটকে আছে।
অফিসিয়ালি কম্যুনিস্ট নয়!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই যে কোরীয় যুদ্ধ বাধে তার ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয় বর্তমান উত্তর কোরিয়া। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই উত্তর কোরিয়ায় চলছে কট্টর কমিউনিস্ট শাসন। কম্যুনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবেই বিশ্বমানচিত্রে অধিক পরিচিত দেশটি। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে অফিসিয়ালি আর কমিউনিস্ট রাষ্ট্র নয় উত্তর কোরিয়া। ২০০৯ সালে এক সংশোধনীর মাধ্যমে দেশটির সংবিধান থেকে মার্কস ও লেনিনবাদকে মুছে দেয়া হয়। অবশ্য এর আগেও দেশটিতে যেটা ছিল সেটাকে কমিউনিজম হিসেবে স্বীকার করতেই নারাজ অনেকে। তাদের দাবি, দেশটিতে কমিউনিজম নয় যেটা ছিল সেটা হচ্ছে আসলে কিম রাজবংশের শাসন।
১০৪ সাল!
পত্রিকায় দেখছেন এটা ২০১৫। উত্তর কোরিয়ার নিজস্ব ‘জুশে’ ক্যালেন্ডার কিন্তু সেটা বলে না। আপনাকে ১৯শ’ বছর পিছিয়ে নিতে এই বর্ষপঞ্জিই যথেষ্ট। স্থানীয় বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী উত্তর কোরীয়রা বাস করছে ১০২ সালে। ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন দেশটির নেতা কিম ইল সং। তার জন্ম তারিখকে ভিত্তি ধরেই ১৯৯৭ সাল থেকে নতুন এই বর্ষপঞ্জি চালু হয়।
৫১টি সামাজিক স্ট্যাটাস
রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পারফরমেন্সের ওপর ভিত্তি করে উত্তর কোরিয়ার বাসিন্দাদের ৫১টি সামাজিক শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এদের মধ্যে যারা সব কিছুতেই উতরে যান, তারাই শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টি অব কোরিয়ার সদস্য হতে পারেন।
১০৫ তলা ভবন
শুধু স্টেডিয়াম নয়, টানা ২০ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবনটাও ছিল উত্তর কোরিয়ার। বিস্ময়ের ব্যাপার, পিরামিডের মতো দেখতে ভবনটা এখনও শূন্যই পড়ে আছে। ৮০’র দশকে একটি হোটেল বানানোর পরিকল্পনা কাজ শুরু হয় ভবনের। কিন্তু ১৯৯২ সালের দিকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়ায় মাঝপথেই কাজ থমকে যায়। প্রায় ৭৫ কোটি ডলার খরচ হওয়ার পরও বাকি কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। আর পরিত্যক্ত অতিকায় ভবনটি এখন মেরামতও করা যাবে না।
উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য