চামড়া দিয়ে কী হয় আর কী হয় না, তা তো নতুন করে বলার নেই। জুতো থেকে ব্যাগ, হয় সবকিছুই। তা বলে বিমানও চামড়া দিয়ে! ভাববেন না যেন খেলনা বিমান। আসল বিমানের কথাই বলা হচ্ছে।
কী মনে হচ্ছে, একেবারেই অসম্ভব? ভাবছেন তো, চামড়া দিয়ে বিমানের বডি তৈরি আসলে আকাশকুসুম কল্পনা? আপনার আমার কাছে অসম্ভব মনে হলেও, চেন্নাইয়ের সেন্ট্রাল লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিএলআরআই)-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা কোনও কঠিন কাজ নয়। অলীক কল্পনাও নয়। শুধু কল্পনার স্তরে নেই, অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছেন তাঁরা।
সিএলআরআই-এর এই গবেষকরা জানান, চামড়ার কঠিন বর্জ্য থেকে বিশেষ ধরনের ন্যানো-কম্পোজিট মেটিরিয়াল তাঁরা তৈরি করেছেন। সেই যৌগটি যথেষ্টই শক্তপোক্ত। অনায়াসে গাড়ির বডি তৈরি হতে পারে। বাইকের তো পারেই। এমনকী প্লেন বা বিমানের বডিও তৈরি করা যাবে এই যৌগে।
এসবের বাইরেও দৈনন্দিন ব্যবহার্য আরও অনেক কিছুই তৈরি হতে পারে চামড়ার বর্জ্য থেকে। বৈদ্যুতিক স্যুইচ থেকে কম্পিউটার ক্যাবিনেট এমনকী শক্তপোক্ত দড়িও তৈরি হতে পারে।
বাতিল চামড়ার সঙ্গে কিছু পলিমার ও ন্যানোপার্টিকেল মিশিয়ে বিশেষ এই যৌগটি তৈরি করা হয়। শক্তির বিচারে এই যৌগটি ধাতব পদার্থের সঙ্গেই তুলনীয়। তাঁরা জানান, যে পলিমারটি ব্যবহার করা হয়, তা সিন্থেটিক রাবারের মতোই কাজ করে।
সিএলআইআর-এর সিনিয়র বিজ্ঞানী ভি শিবাকুমার জানান, ওই যৌগটিতে তাপ দিলেই ধাতুর মতো কঠিন হয়ে যায়। যৌগটি তৈরি করতে তিন ধরনের উপাদানকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় মেশাতে হয়। কতটা মোটা হবে বা কতটা শক্ত করতে হবে, তার ওপর নির্ভর করে যৌগটিতে কোন উপাদান কতটা থাকবে।
যৌগে যে ডাস্টটি ব্যবহার করা হয়, তাতে ক্রোমিয়াম, সিন্থেটিক ফ্যাট, তেল, ট্যানিং এজেন্ট ছাড়াও কিছু রাসায়নিক থাকে। জানা গিয়েছে, ১০০০ কেজির কাঁচা চামড়াকে প্রসেস করার সময় প্রায় সাড়ে সাতশো কেজির মতো কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। প্রতি টন এই বর্জ্য থেকে ২ থেকে ৬ কেজির মতো ‘বাফিং ডাস্ট’ বেরোয়।
সিএলআইআর-এর বিজ্ঞানীরা জানান, চামড়া তৈরির সময় এই যে বর্জ্য পদার্থ উত্পন্ন হয়, তাতে নানা রাসায়নিক থাকায় দূষণও ছড়ায়। ধাতব কঠিন এই যৌগটি তৈরি হলে, সেই দূষণ আর থাকবে না। তাঁরা জানান, জার্মানিতে পলিমার মেটেরিয়াল দিয়ে বিমান তৈরি হলেও, কেউ ‘বাফিং ডাস্ট’ দিয়ে বিমান বানায়নি।