আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুদিন দাপটের সঙ্গে লড়াই করবে বাংলাদেশ, তা অনেকটা চিন্তার বাইরেই ছিল। কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ধারটা ঠিকই চোখে পড়ছে। রঙিন জার্সির পর সাদা জার্সিতেও এখন স্বরূপে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনে প্রোটিয়াদের ২৪৮ রানে আটকে দেয় বাংলাদেশ। বোলারদের নৈপুণ্যে প্রথম দিনটি ছিল বাংলাদেশের। ব্যাটিং-দৃঢ়তায় বুধবার দ্বিতীয় দিনটিও বাংলাদেশের করে নিল তামিম-রিয়াদরা। দ্বিতীয় দিন শেষে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৭৯ রান। প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের থেকে ৬৯ রানে পিছিয়ে মুশফিক বাহিনী। মুশফিকুর রহিম ১৬ ও সাকিব আল হাসান ১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। বৃষ্টির কারণে ২৫ ওভার বাকি থাকতেই দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হয়।
দুই সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকেই ছন্দে ছিল টাইগাররা। ৩১.৪ ওভারে এই দুই ব্যাটসম্যান ৮৯ রানের জুটি গড়েন, যা তৃতীয় উইকেট জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০২ সালে হাবিবুল বাশার ও সানোয়ার হোসেন মিলে ৬৬ রান করেছিলেন।
স্কোরবোর্ডে ৭ রান নিয়ে দিন শুরু করেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। দুই প্রান্ত থেকে বিশ্বসেরা দুই পেসার ডেল স্টেইন ও ভারনন ফিল্যান্ডারকে ভালোই সামলে যান এই দুই বাঁহাতি। স্টেইনের করা দিনের পঞ্চম ওভারের প্রথম দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকান তামিম। মিড অনে প্রথমটি ও পরেরটি কভার আর পয়েন্টের মাঝ দিয়ে। তামিমকে দেখে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন ইমরুলও। ফিল্যান্ডারের করা পরের ওভারে মিডঅফ দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠান ইমরুল। দুজনের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে দিনের প্রথম ঘণ্টা নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ।
১১তম ওভারে প্রথম বোলিং পরিবর্তন। স্টেইনের পরিবর্তে হাশিম আমলা নিয়ে আসেন মরনে মরকেলকে। কিন্তু দ্বিতীয় বলে মরকেলের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেন ইমরুল। অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল সজোরে ড্রাইভ করে দ্বিতীয় বাউন্ডারি মারেন ইমরুল।
সফরকারী প্রথম সারির বোলারদের বেশ ভালোই সামলে যাচ্ছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু পার্ট টাইম বোলার দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে প্রথম সাফল্য এনে দেন। ডানহাতি স্লো মিডিয়াম পেসার স্টিয়ান ফন জিল নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে ইমরুল কায়েসের উইকেট তুলে নেন। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে অসাধারণ স্টাম্পিং করেন কুইন্টন ডি কক। ২৬ রান আসে ইমরুলের ব্যাট থেকে।
তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান তুলতে চাচ্ছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু তার ইনিংস দীর্ঘায়িত হয়নি। প্রোটিয়াদের হয়ে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা সিমন হারমার মুমিনুলের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন। ৬ রান আসে মুমিনুলের ব্যাট থেকে।
দ্রুত দুই উইকেট হারালেও তামিম ইকবাল অন্য প্রান্তে ছিলেন অবিচল। তাকে সঙ্গ দেন ইনজুরি থেকে ফিরে আসা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৮৯ রানের জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে নাকানি-চুবানি খাওয়ান দুজন। এ সময়ে তামিম ইকবাল তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৮তম হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু ইনিংসটি বড় করতে পারেননি তিনি। প্রোটিয়াদের আরেক পার্টটাইম স্পিনার ডিন এলগারের বলে সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প হারান দেশ সেরা ওপেনার, যা এলগারের ক্যারিয়ারের পঞ্চম উইকেট।
তামিম বিদায় নেওয়ার পর টাইগার-দলপতি মুশফিকুর রহিম ক্রিজে আসেন। দুই ‘ভায়রা ভাই’ মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৩৪ রান। এ রান করার পথে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১২তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। উইকেটে সেট হয়ে বেশ দাপটের সঙ্গে ইনিংসটিকে বড় করতে থাকেন তিনি। কিন্তু বৃষ্টির আগে শেষ ওভারে ফিল্যান্ডারের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ৬৭ রান করা রিয়াদ। ১৩৮ বলে ১০ বাউন্ডারিতে দিনের সর্বোচ্চ স্কোরার রিয়াদ তার ইনিংসটি সাজান।
এরপর দুই দফায় বৃষ্টি হানা দিলে আর খেলা শুরু করতে পারেননি আম্পায়াররা। ২৫ ওভার আগেই দিনের খেলা শেষ করে দেন আম্পায়াররা।